স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর শিবির করতে চেয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিলেন হাওড়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।—ফাইল চিত্র।
ভোটের আগে থেকে বিভিন্ন স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা থাকায় পড়াশোনার যে ক্ষতি হয়, তা নিয়ে বরাববরই সরব শিক্ষক-মহলের একটা বড় অংশ। এ বার ঘটল অনেকটা উল্টো ঘটনা। তাঁদের স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর শিবির করতে চেয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিলেন হাওড়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। বালিটিকুরি এলাকার সদানন্দ মিশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তুষার দাস জানিয়েছেন, তাঁদের স্কুলে ছাত্র সংখ্যা কম। ফলে বেশি পড়ুয়া রয়েছে এমন স্কুলের তুলনায় তাঁদের স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর শিবির হলে পড়াশোনার ক্ষতি কম হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, হাওড়ার জেলাশাসকের কাছ থেকে এখনও চিঠির উত্তর আসেনি।
তুষারবাবু বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েনি। টানা ক্লাস হয়েছে। গত কয়েক মাস পড়াশোনায় কোনও বিঘ্ন ঘটেনি। সে কারণে অন্য স্কুলে যেখানে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে, তাদের বদলে আমাদের স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে পড়ার ক্ষতি কম হবে।’’
ইতিমধ্যেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ১০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে পৌঁছেছে। নবান্নের খবর, শীঘ্রই আসবে আরও ৩৫ কোম্পানি। বিভিন্ন স্কুলে শিবির করে ওই জওয়ানদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সদানন্দ মিশন হাইস্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় শ’দুয়েক ছাত্র রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত স্কুলে আসে গড়ে ৭০-৮০ জন। এক শিক্ষক সুরজিৎ মহাপাত্র বলেন, ‘‘তিনতলা স্কুলবাড়ি বেশিরভাগ সময়ে পড়ুয়ার অভাবে খাঁ-খাঁ করে। আমাদের স্কুলে প্রচুর ক্লাসঘর রয়েছে। ঠিক মতো পরিকল্পনা করতে পারলে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকাকালীন পঠনপাঠনও চালানো যেতে পারে।’’ সুরজিৎবাবুর দাবি, স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার যাবতীয় পরিকাঠামো আছে। রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে শুরু করে পরিস্রুত পানীয় জল, মিড-ডে মিলের জন্য রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর। স্কুলটি রাস্তার ধারে হওয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহলদারিতেও কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
সদানন্দ মিশন হাইস্কুলের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্য কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরাও। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মন্তব্য, ‘‘ধুঁকতে থাকা এমন স্কুলের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসন যদি নির্বাচন কমিশনকে দেয়, তা হলে ভোটের সময়ে পঠনপাঠনে ক্ষতি অনেক কম হবে।’’ পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘ভোট শুরু হতে এখনও দেরি আছে। সবে আসতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন একটু আগে থেকে পরিকল্পনা করে স্কুল নির্বাচন করলে পঠনপাঠনের ক্ষতি কম হবে।’’
হাওড়ার জেলাশাসক চৈতালী চক্রবর্তী অবশ্য বলেছেন, ‘‘যে কেউ চিঠি দিতেই পারেন। তবে কোন স্কুলে কেন্দ্রীয় বাহিনী যাবে আর কোন স্কুলে যাবে না, সেটা আমরা ঠিক করব।’’