প্রতীকী ছবি।
শপথ গ্রহণের পরে চার মাসও কাটেনি। সে ভাবে তিনি কাজও শুরু করেননি। অথচ এর মধ্যেই পদত্যাগ করে বসলেন বিরোধীশূন্য আমতা-১ ব্লকের চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান।
মোশারফ আলি মিদ্যা নামে পদত্যাগী ওই প্রধানের দাবি, ‘‘শারীরিক কারণে পদত্যাগ করেছি।’’ কিন্তু স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের একাংশের দাবি, দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই পদত্যাগ করেছেন মোশারফ। বিডিও লোকনাথ সরকার বলেন, ‘‘দিনপনেরো আগে প্রধান পদত্যাগপত্র জমা দেন। আইনানুযায়ী এ নিয়ে শুনানি হয়। শুক্রবার তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসকের কাছ থেকে নির্দেশ এলে পরবর্তী প্রধান নির্বাচন করা হবে।’’ আপাতত প্রধানের দায়িত্ব উপপ্রধান সামলাবেন বলে বিডিও জানান।
তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই চন্দ্রপুরে দলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলছে। একটি গোষ্ঠীতে ছিলেন আগের বোর্ডের প্রধানের স্বামী আসফার মিদ্যা ও তাঁর অনুগামীরা। অন্য গোষ্ঠীতে মোশারফ-সহ কয়েকজন। এলাকাটি পড়ে উলুবেড়িয়া উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায়। এই পঞ্চায়েতে মোট আসন ১০টি। সবগুলিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে যায় তৃণমূল। দলীয় নেতৃত্বের একাংশ আসফারের বিরোধী গোষ্ঠীর এক নেতাতে পরবর্তী প্রধান হিসাবে তুলে ধরেন। কিন্তু নির্বাচনের পরেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বজায় ছিল। তার জেরে বিরোধী গোষ্ঠীর দাপটে আসফার ও তাঁর অনুগামীরা এলাকা ছাড়েন। তাঁদের মারধর করা হয়
বলেও অভিযোগ।
পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্ব মেটার পরে দেখা যায়, আসফারের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর যে নেতাকে প্রধান হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধেও মারপিটে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। ফলে, ওই নেতাকে প্রধানের পদে বসাতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব রাজি হননি। এ নিয়ে ওই নেতার সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতাদের বিবাদ বাধলেও চিড়ে ভেজেনি। তখনই মোশারফকে প্রধানের পদে বসানো হয়।
সম্প্রতি ওই নেতা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। তাঁর উপর থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানাও উঠে গিয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের দাবি, গ্রেফতারি পরোয়ানা উঠে যাওয়ায় ওই নেতা ফের দলের কাছে প্রধান হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেই দাবি মেনেই মোশারফকে পদত্যাগ করতে বলা হয়।
তবে উলুবেড়িয়া উত্তরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী নির্মল মাজি চন্দ্রপুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘চন্দ্রপুরে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। মোশারফ প্রধানের কাজে সময় দিতে পারছিলেন না। তাঁকে যখন প্রধান হিসাবে নির্বাচিত করা হয় তখনই তিনি জানিয়েছিলেন সময় দিতে না পারলে পদত্যাগ করবেন। আমরা তাঁর দাবি মেনে নিয়েছি। তবে সংগঠনের কাজে তাঁকে ব্যবহার করা হবে।’’ পরবর্তী প্রধান কে হবেন, তা দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে মন্ত্রী জানান।