পুরসভার শিশু উদ্যানে জলের বোতলের গুদাম

মাত্র এক বছর আগেই হাওড়া পুরসভার উদ্যোগে উদ্বোধন করা হয়েছিল শিশু উদ্যান-সহ মাল্টিজিমের। কিন্তু তার পর থেকেই সেখানে আর কোনও শিশুকে খেলতে দেখা যায়নি।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২০
Share:

শিশু উদ্যানে ডাঁই করে রাখা জলের বোতল (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র

ছিল শিশু উদ্যান। হয়েছে জলের বোতলের গুদাম।

Advertisement

মাত্র এক বছর আগেই হাওড়া পুরসভার উদ্যোগে উদ্বোধন করা হয়েছিল শিশু উদ্যান-সহ মাল্টিজিমের। কিন্তু তার পর থেকেই সেখানে আর কোনও শিশুকে খেলতে দেখা যায়নি। মাল্টিজিমেও কাউকে দেখা যায়নি শারীরচর্চা করতে। অভিযোগ, উদ্বোধনের কয়েক মাস পর থেকেই বি আর অম্বে়ডকরের নামাঙ্কিত সেই শিশু উদ্যান ও মাল্টিজিম হয়ে গিয়েছে বোতলবন্দি জলের গুদাম। পার্ক নষ্ট করে চলছে জল বিক্রির ব্যবসা।

হাওড়া পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ বাজার লাগোয়া একটা পরিত্যক্ত জায়গা বছর খানেক আগে পরিষ্কার করে তৈরি হয় একটি শিশু উদ্যান। সেখানে রাখা হয় শিশুদের বিনোদনের নানা সরঞ্জাম। সেই শিশু উদ্যানের সামনেই কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করা হয় মাল্টিজিম। এর পাশাপাশি, শিশু উদ্যান লাগোয়া মাঠকে খেলাধুলোর উপযুক্ত করে তৈরি করা হয়। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, উদ্বোধনের পর থেকে শিশু উদ্যান কার্যত তালাবন্ধ হয়ে পড়েছিল। মাল্টিজিমে এলাকার কিছু যুবক প্রথমে ব্যায়াম করতে এলেও পরে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement

এলাকার বাসিন্দা অমরেশ জয়সওয়াল বলেন, ‘‘ওই জায়গায় কেন একটা শিশু উদ্যান তৈরি করা হল আর কেনই বা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচে মাল্টিজিম করা হল, তা আমরা জানি না। কারণ ওই জায়গাটি মূলত ব্যবসা কেন্দ্র। পাশেই মাছ ও আনাজ বাজার। আবর্জনায় ভরা ওই জায়গায় কোনও শিশুকে পরিবারের লোকজন নিয়ে আসবেন কেন?’’

স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী বা এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, উদ্বোধনের পরে এই ভাবে পার্কটি তালাবন্ধ হয়ে পড়ে থাকার কয়েক মাস পরেই দেখা যায়, সেখানে ওই জল বিক্রেতা সংস্থা ঢুকে পড়েছে। গত পাঁচ ছ’ মাস ধরে বড় বড় ট্রাকে করে জলের বোতলের পেটি ওই সংস্থার স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর শিশু উদ্যান ও মাল্টিজিমে রাখতে শুরু করেন।

অভিযোগ, বোতলবন্দি জলের গুদাম করার জন্য ওই শিশু উদ্যান ওই সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটরকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তিনি আবার এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর লক্ষ্মী সাহনির স্বামী সন্তোষ সাহনির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে এলাকার লোকজনের দাবি।

পুরসভা কি পার্কে জলের বোতল জমা করে রাখার অনুমতি দিয়েছে? ওই পানীয় জল প্রস্তুতকারক সংস্থার ডিস্ট্রিবিউটর নীতেশ সিংহ বলেন, ‘‘পুরসভা আমায় অনুমতি দেয়নি ঠিকই। কিন্তু সন্তোষদা আমাকে রাখতে দিয়েছেন।’’

ভাড়া নিয়ে জলের বোতল রাখার অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন সন্তোষবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ছট পুজোর জন্য ওই জলের বোতল রাখতে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য কোনও ভাড়া নেওয়া হয়নি।’’

পার্কটি দেখভালের জন্য পুরসভা তিন জন কর্মীকে নিয়োগ করেছিল। কিন্তু তাঁরাও বিষয়টি পুর কর্তাদের জানাননি বলে অভিযোগ। গোটা ব্যাপারটি নিয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিলেন বলে দাবি করেছেন পার্ক ও উদ্যানের দায়িত্বে থাকা মেয়র পারিষদ বিভাস হাজরা। তিনি বলেন, ‘‘খবর পেয়ে আমি নিজে যাই ওই পার্ক পরিদর্শনে। শিশু উদ্যানে একটি কোম্পানির প্রচুর জলের বোতল দেখে সঙ্গে সঙ্গে সরানোর নির্দেশ

দিয়েছি এবং পার্কটিকে পরিষ্কার করতে বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন