ফি ফাঁকি বহু লক্ষ, কাঠগড়ায় ৩৭টি সংস্থা

যে কারখানার বার্ষিক লাইসেন্স ফি ১০ লক্ষ টাকার বেশি, তারা দেয় মাত্র ৭০ হাজার টাকা। আবার যে ব্যবসায়ী বছরে দেড় হাজার টাকা দেন, তাঁর কারখানার বার্ষিক লাইসেন্স ফি আসলে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৮ ০১:১৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ যেন একেবারে ‘পুকুর চুরি’!

Advertisement

যে কারখানার বার্ষিক লাইসেন্স ফি ১০ লক্ষ টাকার বেশি, তারা দেয় মাত্র ৭০ হাজার টাকা। আবার যে ব্যবসায়ী বছরে দেড় হাজার টাকা দেন, তাঁর কারখানার বার্ষিক লাইসেন্স ফি আসলে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। চলতি আর্থিক বছরে (২০১৭-’১৮) এমনই ৩৭টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করেছিল হাওড়া পুরসভা। পুর কর্তাদের দাবি, ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে এত বছরে ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ আয় হয়েছে মাত্র ৪ লক্ষ ৭০২ টাকা। বাস্তবে যা হওয়ার কথা ২৮ লক্ষ ২০ হাজার ১৭৫ টাকা।

ট্রেড লাইসেন্সের পুনর্মূল্যায়ন করতে গিয়ে এমন গরমিল দেখে চোখ কপালে উঠেছিল হাওড়ার পুর কর্তাদের। অভিযোগ, এর ফলে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা কম রাজস্ব জমা পড়েছে। পুর কর্তাদের আরও অভিযোগ, সব থেকে বেশি গরমিল ধরা পড়েছে বালি পুর এলাকায়। যে ৩৭টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সিংহভাগই বালি-বেলুড়-লিলুয়া অঞ্চলে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, গত আর্থিক বছরে (২০১৬-’১৭) বালি-সহ হাওড়ার মোট ৬৬টি ওয়ার্ড থেকে ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ আদায় হয়েছিল প্রায় ১৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে ১৫ কোটি। কিন্তু শনিবার চলতি আর্থিক বর্ষের শেষ দিনে দেখা গিয়েছে, আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা। রাজস্ব দফতরের মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পুর্নমূল্যায়নে ৩৭টি সংস্থাকে চিহ্নিত করা ও যে সব ব্যবসার এত দিন কোনও লাইসেন্স ছিল না সেগুলিকে নোটিস দিয়ে নতুন ট্রেড লাইসেন্স করানোর ফলেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা গিয়েছে।’’

২০১৫-র শেষে হাওড়া পুরসভার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বালি। পুর কর্তারা জানান, সংযুক্তির পরেই গত আর্থিক বছরে বালির ১৬টি ওয়ার্ডের সম্পত্তিকরে গরমিল ধরা পড়ে। এক কর্তা বলেন, ‘‘তালিকা দীর্ঘ। এমনও দেখা গিয়েছে, পুর নথিতে যেটা ফাঁকা জমি হিসেবে বছরে ১০০ টাকা কর জমা পড়ে, সেখানে রয়েছে বহুতল। যার কর বছরে ৩-৪ হাজার টাকা।’’ তাই এ বার রাজস্ব দফতর প্রথম থেকেই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির উপরে নজর রাখতে শুরু করে।

হাওড়ার মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বালির কেন উন্নয়ন হয়নি, এ সব দেখলেই বোঝা যায়। কখনওই কোনও কারচুপি বা গরমিল রেয়াত করা হবে না।’’ অরুণবাবু জানান, প্রতি বছরই ট্রেড লাইসেন্সের পুনর্মূল্যায়নের সময়ে এক-দু’জন করে ধরা পড়েন। কিন্তু এ বার বালির ১৬টি ওয়ার্ড মিলিয়ে যে এত কারচুপি ধরা পড়বে, আঁচ করেননি পুর কর্তারা। ৩৭টির মধ্যে কয়েকটি বাদ দিলে বাকি সবই বালির। তিনি বলেন, ‘‘বালি-বেলুড়-লিলুয়া মূলত শিল্পাঞ্চল হওয়ায় সেখানে গরমিল বেশি ধরা পড়েছে।’’

গরমিল ধরতে কিছু পন্থা নিয়েছিলেন পুর কর্তারা। যেমন বালি পুরসভায় দীর্ঘ দিন কাজ করা এক অফিসারকে এখন হাওড়ার লাইসেন্স অফিসার পদে বসানো হয়েছে। আবার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পুনর্মূল্যায়ন করতে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল করে দফতরের মেয়র পারিষদ বা কর্তাদের দেখাতে হয়েছে কর্মীদের। এক কর্তা বলেন, ‘‘এর ফলে সর্ষের মধ্যে ভূত থাকলেও সুবিধা হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন