হয়রানি: রাস্তা আটকে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠনকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার জগৎবল্লভপুর। সৌজন্যে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। শুক্রবার স্থায়ী সমিতিতে জায়গা না পেয়ে একটি গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকেরা প্রায় তিন ঘণ্টা বড়গাছিয়ায় হাওড়া-আমতা রোড অবরোধ করেন। বেলা ১টা থেকে শুরু হয়ে অবরোধ চলে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। নাকাল হন মানুষ।
এর আগে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়েছিল জগৎবল্লভপুর। শেষ পর্যন্ত দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে ভোটাভুটিও হয়। দলের রাজ্য নেতৃত্ব ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভোটাভুটি এড়াতে না পারায়।
পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট স্থায়ী সমিতির সংখ্যা ৯টি। একেকটি স্থায়ী সমিতিতে পাঁচ জন করে সদস্য থাকেন। স্থায়ী সমিতি নির্বাচনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল পঞ্চায়েত সমিতির নির্বাচিত ৪০ জন সদস্য, ১৪টি পঞ্চায়েতের প্রধান, নির্বাচিত ৩ জন জেলা পরিষদ সদস্য, ২ জন সাংসদ এবং ২ জন বিধায়ক মিলিয়ে মোট ৬১ জনের। কিন্তু সাংসদ ও বিধায়কেরা অনুপস্থিত থাকায় সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৫৭-তে। এই ৫৭ জনের মধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির তিন জন সদস্য বিজেপি-র। বাকি সকলেই তৃণমূল। তাঁরাও এদিন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে বিডিও অফিসে হাজির হন।
কিন্তু স্থায়ী সমিতি গঠনে ঐক্যমত্য হয়নি। জগৎবল্লভপুরের বিধায়ক আব্দুল গণি অনুগামী এবং দলের জগৎবল্লভপুর কেন্দ্র সভাপতি প্রয়াত বিমান চক্রবর্তীর অনুগামীদের গোলমাল বেধে যায়। কোন কোন সদস্যকে স্থায়ী সমিতিতে নেওয়া হবে তা নিয়ে বিডিও-র কাছে উভয় গোষ্ঠীই পৃথক প্যানেল জমা দেয়। ভোটাভুটিতে দেখা যায় বিধায়কের প্যানেলে থাকা সব ক’টি স্থায়ী সমিতির সদস্যরা জিতেছেন। বিধায়কের গোষ্ঠীর প্যানেল পেয়েছে ৩০টি ভোট। বিমানবাবুর অনুগামীদের প্যানেল পেয়েছে ২৭টি ভোট।
ফল প্রকাশ হওয়ার পরেই অবস্থান বিক্ষোভে নেমে পড়েন বিমানবাবুর অনুগামীরা। প্রথমে তাঁরা বিডিও অফিসে প্রায় আধঘণ্টা অবস্থান করেন। তারপরে তাঁরা রাস্তা অবরোধে নেমে পড়েন।
বিমানবাবুর অনুগামীদের নেতৃত্ব দেন জগৎবল্লভপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রঞ্জন কুন্ডু। তিনি বলেন, ‘‘বিধায়কের অনুগামীরা দলের উর্ধতন নেতৃত্বের কথা অমান্য করে পাল্টা প্যানেল জমা দিয়েছেন। বিজেপির সমর্থন নিয়ে তাঁরা নিজেদের প্যানেলকে জিতিয়েছেন। এরই প্রতিবাদে আমরা রাস্তা অবরোধ করছি।’’ অন্যদিকে বিধায়কের অনুগামীদের নেতৃত্বে ছিলেন মঞ্জু মুন্সি। তিনি বলেন, ‘‘দলের নির্দেশ অমান্য করেছেন বিমানবাবুর অনুগামীরাই। দলের পক্ষ থেকে প্যানেল পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পাল্টা প্যানেল জমা দিয়ে বিমানবাবুর অনুগামীরাই ভোটাভুটির পথ তৈরি করেন।’’ বিজেপি-র তিন সদস্যের সমর্থন নেওয়ার প্রসঙ্গে মঞ্জু বলেন, ‘‘গোপনে ভোটাভুটি হয়েছে। বিজেপির তিন সদস্য কোন প্যানেলকে ভোট দিয়েছেন তা বলব কী ভাবে?’’ বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি অনুপম মল্লিক স্বীকার করেন তাঁদের দিন সদস্য তৃণমূলেরই একটি গোষ্ঠীর প্যানেলের পক্ষ্যে ভোট দিয়েছেন। যদিও একইসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোন গোষ্ঠীকে তাঁরা ভোট দিয়েছেন তা প্রকাশ্যে বলা যাবে না।’’
গোটা ঘটনায় বিরক্তি এড়াতে পারেননি হাওড়া সদর জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে দুটি গোষ্ঠীকেই আলোচনা করে স্থায়ী সমিতি গঠন করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটল তা খারাপ হল।’’