কারখানার জমিতে ফ্ল্যাট, প্রশ্নে অনুমতি

হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে শালিমারের কাছে আন্দুল রোডে প্রায় সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে একটি বন্ধ কারখানা রয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৪
Share:

এই পরিত্যক্ত জমিতে আবাসন হওয়া নিয়েই বিতর্ক। হাওড়ার আন্দুল রোডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

পরিত্যক্ত কারখানার জমিতে তৈরি হবে বহুতল আবাসন। গড়ে উঠবে চারটি উনিশতলা টাওয়ার। অনুমোদন দিয়েছে হাওড়া পুরসভা। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি না থাকা সত্ত্বেও কোন যুক্তিতে পুরসভা সেই অনুমোদন দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই তোলপাড় শুরু হয়েছে পুরসভার অন্দরে। নড়েচড়ে বসেছেন পুরকর্তারাও। তড়িঘড়ি মেয়র পারিষদদের বিশেষ বৈঠক ডেকে পুরসভার তিন আধিকারিককে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। খর্ব করা হয়েছে পুর কমিশনারের ক্ষমতাও। পুরকর্তাদের দাবি, তাঁদের অন্ধকারে রেখেই ওই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পুরকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মেয়র ও পুর কমিশনারের দ্বন্দ্ব সামনে চলে এসেছে। যদিও দু’জনেই তা অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে শালিমারের কাছে আন্দুল রোডে প্রায় সাড়ে ১০ বিঘা জমিতে একটি বন্ধ কারখানা রয়েছে। একটি নির্মাণ সংস্থা ওই জমিতেই বহুতল আবাসন তৈরির জন্য পুরসভার বিল্ডিং দফতরে আবেদন করে ২০১৬ সালে। দু’বছর ধরে সেই ফাইল বিল্ডিং দফতরে আটকে থাকলেও গত মাসের ৫ তারিখ হঠাৎ তা নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়। এর পরে ৮ তারিখ সেটি মেয়র পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয় এবং অনুমোদন পেয়েও যায়।

এ নিয়ে মেয়র রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেয়র পারিষদদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে অনেক তথ্য গোপন করে এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কী ভাবে ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ হাওড়া পুরসভার বর্ষীয়ান মেয়র পারিষদ বাণী সিংহরায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভাগুলির কাজকর্মে সব সময়ে স্বচ্ছতা চান। কিন্তু আমাদের না জানিয়েই এত বড় শিল্পের জমিতে আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, সম্প্রতি ‘ভুল’ বুঝতে পারেন পুরকর্তারা। হাইকোর্টের এক আইনজীবী ওই জমিতে বহুতল করার পুর অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন তুলে চিঠি দেন পুরসভাকে। তার পরেই মেয়র পারিষদেরা এ নিয়ে বৈঠকে বসেন। পুরসভা সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিল্ডিং দফতরের তিন আধিকারিককে পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পে পাঠানো হবে। সেখানেই ঠিক হয়েছে, সমস্ত দফতরের ফাইল এখন থেকে মেয়র পারিষদদের কাছে যাবে। তাঁরা মনে করলে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন। প্রয়োজনে তাঁরা পুর কমিশনারের কাছে না পাঠিয়ে মেয়রের কাছেও পাঠাতে পারবেন।

মেয়র বলেন, ‘‘বহু ফাইল পুর কমিশনারের কাছে আটকে থাকায় উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সেই কাজে গতি আনতেই এই ব্যবস্থা।’’

পুরকর্তাদের বক্তব্য, যে জমিতে ওই আবাসন তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে, সেটি এখনও হাওড়া সদরে ২৩৬টি শিল্প কারখানার মধ্যে নথিভুক্ত। তা ছাড়া, আবাসন তৈরির ছাড়পত্রের জন্য মেয়র পরিষদের বৈঠকে ফাইল পাঠানোর আগে বিল্ডিং দফতরের কাছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র এবং ভূমি রাজস্ব দফতরের জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত ছাড়পত্র জমা দেওয়া উচিত ছিল। ভাল করে কাগজপত্র খতিয়ে না দেখেই বহুতলের অনুমোদন দেওয়া যে ঠিক হয়নি, তা মানছেন পুরকর্তারাও। তাঁদের বক্তব্য, এই ‘ভুল’ শোধরাতে খুব শীঘ্রই অনুমোদনটি খারিজ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পুরকর্তাদের বক্তব্য, বিষয়টিতে যে জটিলতা রয়েছে এবং কাগজপত্র ঠিক নেই, তা বিল্ডিং দফতরের আধিকারিক ও পুরমিশনারের দেখা উচিত ছিল। কিন্তু তা তাঁরা কেন করেননি, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘বিষয়টি দেড় বছরের পুরনো। ওই প্রকল্পের কাগজপত্রে গোলমাল থাকলে তা দেখা হবে। তবে আমার কাছে ফাইল আটকে থাকার যে অভিযোগ উঠেছে, তা ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন