বিদ্যুতের তারের পাশেই জ্বলছে স্টোভ

নন্দরাম মার্কেটের পরে এ বার বাগড়ি মার্কেট। ফের একবার কলকাতার বড় বাজারগুলির অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জেলার বড় বাজারগুলির হাল কী? কতটা সুরক্ষিত ওই সব বাজার? আনন্দবাজারের অন্তর্তদন্তে আজ, হুগলির ডানকুনি বাজার।প্রায় ছয় দশক আগে ডানকুনি স্টেশনের কাছে এই বাজার বসতে শুরু করে স্টেশন ও লাগোয়া লেভেলক্রসিং চত্বরে। যত দিন গিয়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে দোকানের সংখ্যা।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

ডানকুনি শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৬
Share:

জট: অজস্র বিদ্যুতের তার জড়ো হয়ে রয়েছে। ছবি: দীপঙ্কর দে

সেতুর নীচে ভাতের হোটেল, গ্যাসেই রান্না হয় সেখানে। আবার তারই পাশে রয়েছে গুটি কয়েক চায়ের দোকানে। সেকেলে উনুনের গনগনে হাঁ মুখই ভরসা সে সব দোকানে। বাদ পড়ে না কেরোসিনের স্টোভও, দোকানি পাম্প করে আগুন তোলেন ছাদ বরাবর। সেখানেই আবার ঝুলে থাকে বিদ্যুতের তার। নিজস্ব কেরামতিতে একটা সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে অন্য তার। জোড়ের মুখে লাগানো ফিতেও খুলে গিয়েছে কবে। না আছে ব্যবসায়ীর নজর, না প্রশাসনের।

Advertisement

এমনই ছবি ডানকুনি স্টেশন বাজারের। রেলের উড়ালপুলের নীচ থেকে স্টেশন পর্যন্ত প্রায় ১২০০ দোকান এ ভাবেই চলে নিশ্চিন্তে। আগুনের প্রশ্ন উঠলে ব্যবসায়ীদের অনেক মুখেই ফুটে ওঠে হাসি, ‘‘ভগবানই আমাদের ভরসা এখানে।’’

প্রায় ছয় দশক আগে ডানকুনি স্টেশনের কাছে এই বাজার বসতে শুরু করে স্টেশন ও লাগোয়া লেভেলক্রসিং চত্বরে। যত দিন গিয়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে দোকানের সংখ্যা। ২০০৫ সালে উড়ালপুল তৈরি হওয়ার পর তার নীচেও বসে গিয়েছে অস্থায়ী দোকানের সারি। কাঁচা আনাজ, মাংস, মাছের আড়ত থেকে জামাকাপড়, মুদিখানা, খেলনা সবই রয়েছে। অথচ ট্রেড লাইসেন্স নেই কারও। রেলের জমির উপরই চলে নিত্য ব্যবসা। ফলে স্থায়ী দোকানঘরও নেই। কারও দরমার বেড়, কারও বাঁশের কাঠামো সম্বল। মাথায় পলিথিনের ছাউনি। ‘‘সব মিলিয়ে আস্ত জতুগৃহ। আগুন লাগলে ব্যবসায়ীদের লোকসান তো হবেই। আমরা যারা বাজার করতে যাই, তাঁরাও মরব,’’ বলেন স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন দাস।

Advertisement

তেমন বিপদ ঘটে গিয়েছে বছর খানেক আগেই। বরাত জোরে বেঁচেছে বাজার। বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সদস্য বাবলু কুণ্ডু বলেন, ‘‘দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা ধুপ জ্বালান। আমাদের অনুমান সেখান থেকেই আগুন ছড়িয়েছিল সে বার। দু’টি দোকান পুরো পুড়ে দিয়েছিল। ক্ষতি হয়েছিল আরও পাঁচটি দোকানের।’’ জানা গিয়েছে, রাত পাহারায় থাকা কর্মীরাই সে বার আগুন আয়ত্তে এনে ফেলেছিলেন। পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভায়।

প্রশাসন কী ভাবছে?

ডানকুনির পুর প্রধান হাসিনা শবনম বলেন, ‘‘ওখানে কোনও ব্যবসায়ীর অনুমোদন নেই। রেলের জমিতে অনুমোদন দেওয়ার অধিকারও আমাদের নেই। তবে কলকাতার ঘটনার পর আমরা আতঙ্কিত। যে কোনও দিন বড় বিপদ ঘটতে পারে। তাই আমরা ভাবছি ওই ব্যবসায়ীদের নোটিস পাঠাব।’’

কিন্তু কী ভাবে, কী নোটিস পাঠানো হবে জানান পুরপ্রধান। সে সব আলোচনায় করে স্থির হবে। তত দিন ব্যবসায়ীরা থাকবেন তাঁদের উল্লেখ করা ‘ভগবানের ভরসা’য়। যদিও অস্থায়ী কাঠামোর দোকানে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তরফে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রয়েছে মিটারও। কী করে?

বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সঞ্জয় গুপ্ত বলেন, ‘‘রেল বললেই আমরা উঠে যাব— এমন শর্তের আমাদের অস্থায়ী মিটার দেওয়া হয়েছে।’’ সঞ্জয়বাবুর দাবি, অগ্নি নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা মাটি খুঁড়ে জলের ব্যবস্থা করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আরপিএফ তা বন্ধ করে দেয়।

কিন্তু রেলের জমিতে ব্যবসা করাটাই তো বেআইনি? প্রশ্ন উঠতেই সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা বিধায়ক, সাংসদের কাছে চিঠি দিয়েছি, আমাদের বিকল্প জায়গা দেওয়া হোক। প্রয়োজনে আমরা টাকা দিয়ে দোকানঘর কিনে নেব। ৬০ বছরের ব্যবসা, কত পরিবার নির্ভরশীল। এ ভাবে তো উঠিয়ে দিতে পারি না।’’

বিকল্প ব্যবস্থার কথা কী ভাবছেন? চণ্ডীতলার বিধায়ক স্বাতী খন্দকর বলেন, ‘‘বাজার কমিটি তরফ থেকে লিখিত আবেদন করলে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন