Coronavirus

মালয়েশিয়ায় গিয়ে আতান্তরে দুই পরিবার

কলকাতা থেকে বিমানে সিঙ্গাপুর ঘুরে তাঁরা মালয়েশিয়া পৌঁছন মঙ্গলবার। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছে গোটা দেশ।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০৩:১১
Share:

প্রতীকী ছবি

বিদেশে বেড়াতে গিয়ে করোনার চক্রব্যুহে আটকে পড়েছে শ্রীরামপুরের দু’টি পরিবার। কী করে বাড়ি ফিরবেন, আদৌ কবে ফেরা সম্ভব হবে তা নিয়েই আতান্তরে পড়েছে তারা। কারণ, ফেরার বিমান বন্ধ হচ্ছে। দেশে ফিরতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করছেন তাঁরা।

Advertisement

শ্রীরামপুর ইএসআই হাসপাতাল আবাসনের বাসিন্দা রবি রায়, স্ত্রী সুস্মিতা এবং পাঁচ বছরের ছেলে রিয়ানকে নিয়ে গত শনিবার একটি ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে গিয়েছেন শ্রীরামপুরের অমূল্যকাননের বাসিন্দা রামু থাপা, স্ত্রী সুধা এবং বছর দশেকের ছেলে শ্রিট। রবি এবং রামু— দু’জনেই মাছ ব্যবসায়ী। কলকাতা থেকে বিমানে সিঙ্গাপুর ঘুরে তাঁরা মালয়েশিয়া পৌঁছন মঙ্গলবার। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভুগছে গোটা দেশ। শুক্রবার তাঁদের কলকাতায় ফেরার উড়ান ধরার কথা ছিল। কিন্তু ভ্রমণ সংস্থার তরফে জানানো হয়, বুধবার দেশে ফিরতে হবে। ঠিক হয়, প্রথমে বাসে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে বিমানে ব্যাঙ্কক হয়ে কলকাতা। সেই মতো ভোর পাঁচটায় তাঁরা বাস টার্মিনাসে যান। সেখানে তাঁদের বলা হয়, সীমান্ত বন্ধ। বাস যাবে না।

এর পরে ভ্রমণ সংস্থার এজেন্ট তাঁদের গাড়িতে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে নিয়ে যান। সেখানে সকাল সাড়ে সাতটায় কলকাতার বিমান ছাড়ে। কিন্তু সময়ে তাঁরা বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারেননি। বৃহস্পতিবার ফের তাঁরা কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে যান। দেখা যায়, সন্ধ্যায় একটি মাত্র বিশেষ বিমান ভারতে যাবে। বিমানের টিকিটও কাটেন তাঁরা। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই মোবাইলে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, টিকিট বাতিল হয়েছে।

Advertisement

এখন হোটেলের ঘরে বসে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। কাল, রবিবার ভোর থেকে ভারতের মাটিতে আন্তর্জাতিক বিমান নামবে না। ফলে দুর্ভাবনা বেড়েছে। শুক্রবার কুয়ালালামপুরে হোটেলের ঘরে বসে রবি জানান, রাস্তাঘাট ফাঁকা। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। হোটেল থেকেই খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। খাবারের দাম অত্যন্ত বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্বিষহ পরিস্থিত। যা টাকা আছে, আর দিন দু’য়েক চলবে। তার পরে কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।’’

এ দিন ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে পরিস্থিতির কথা জানালেও দেশে ফেরার ব্যবস্থার আশ্বাস মেলেনি। রামুরা শুনেছেন, আগামী ৩১ তারিখ থেকে ওই দেশের সরকার সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দেবে। হোটেলের সামনে একটি দোকান থেকে তাঁরা শুকনো খাবার কিনছেন তাঁরা। ওই দোকানিও তাঁদের এমনটাই জানিয়েছেন।

রবি বলেন, ‘‘খেতে-ঘুমোতে পারছি না আমরা। কান্না পাচ্ছে। অসহায় অবস্থায় সময় কাটছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অনুনয় করছি, আমাদের দেশে ফেরানোর কিছু একটা ব্যবস্থা করুন।’’ রবির স্ত্রী সুস্মিতা বলেন, ‘‘দু’টো বাচ্চা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। ওদের নিয়ে কোথায় যাব! আমাদের একটাই আর্তি, সরকার আমাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক। ওখানে নিয়ে গিয়ে আমাদের নির্দিষ্ট সময় আলাদা করে রাখা হোক। মমতাদিই (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে পারেন।’’

রামুর বৌদি জয়ন্তী থাপা শুক্রবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে ই-মেল করে গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন। জয়ন্তী বলেন, ‘‘খুব দুশ্চিন্তায় আছি। মুখ্যমন্ত্রী কিছু একটা ব্যবস্থা করলে চিন্তামুক্ত হই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement