Lockdown

‘চলন্ত বাজার’ বন্ধ, ঘুম নেই হকারদের

নিত্যযাত্রীরা মজা করে বলেন, ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার লোকাল ট্রেনে বেনারসি আর টোপর মিললে বিয়েও সেরে ফেলা যায়!

Advertisement

প্রকাশ পাল

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৫:৩০
Share:

এএফপি-র তোলা প্রতীকী ছবি।

এখানে সব মেলে।

Advertisement

সিঙাড়া, চপ-মুড়ি, মিষ্টি, ফল, চা-কফি, কেক, ঝালমুড়ি, ডিমসেদ্ধ, রুটি-তরকারি, ডালপুরি, তাঁতের শাড়ি, চাদর, গামছা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম— কী নয়!

নিত্যযাত্রীরা মজা করে বলেন, ব্যান্ডেল-কাটোয়া শাখার লোকাল ট্রেনে বেনারসি আর টোপর মিললে বিয়েও সেরে ফেলা যায়! শুধু ওই শাখাই বা কেন, রাজ্যের সর্বত্রই ট্রেন এবং প্ল্যাটফর্মের হাজার হাজার হকারের এখন মাথায় হাত পড়েছে। দুশ্চিন্তায় কারও চোখে ঘুম নেই। করোনার-জেরে ট্রেনের চাকা গড়াচ্ছে না। তাই বন্ধ ‘চলন্ত বাজার’ও। পেট চলবে কী করে?

Advertisement

পঞ্চাশোর্ধ্ব অসীম সূত্রধর হুগলির ২ নম্বর কাপাসডাঙায় থাকেন। হকারি করছেন সাড়ে তিন দশক। আগে ট্রেনে মোজা-রুমাল বিক্রি করতেন। পায়ে ব্যথার জন্য এখন দৌড়ঝাঁপ করতে সমস্যা হয়। গত সাত মাস ধরে শেওড়াফুলি স্টেশনে ঝালমুড়ি বেচছিলেন। এখন ধূ ধূ করছে স্টেশনের চৌহদ্দি। ফলে, রোজগার হারিয়েছেন প্রৌঢ়। বাড়িতে বৃদ্ধা মা এবং মাসি শয্যাশায়ী। স্ত্রীও কার্যত তাই। ছেলে কলেজ পড়ুয়া। পাঁচ জনের সংসার চলছিল ঝালমুড়ি বিক্রির আয়েই।

এখন কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না অসীম। মাসে ৬-৭ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছিল। তা-ও গেল। অসীমের আক্ষেপ, ‘‘ঘটিবাটিও নেই যে বিক্রি করব। যত দিন না অবস্থা শুধরোচ্ছে, সরকার যদি কিছু অনুদান দিত, ওষুধ কিনে অসুস্থ মানুষগুলোকে অন্তত বাঁচিয়ে রাখতে পারতাম।’’

হুগলি মোড়ের বাসিন্দা ভাইদাস দীর্ঘদিন ধরে ট্রেনে ফেরি করেন। কখনও ছড়ার বই, কখনও লজেন্স। সকাল ৮টা থেকে সন্ধে পর্যন্ত ব্যান্ডেল-হাওড়া শাখার ট্রেনে তাঁর দেখা মেলে। সেই রোজনামচায় ছেদ পড়েছে। স্ত্রী- মেয়ে এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে তিনিও সঙ্কটে। গৃহবন্দি ভাইদাস বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগেও আমাদের বেরোতে হয়। ঝড়জল মাথায় করে এক কামরা থেকে অন্য কামরায় ছুটি। কখনও দুর্যোগের জেরে ট্রেন বন্ধ হয়ে গেলে স্টেশনে রাত কাটাতে হয়। কিন্তু এখন আমরাও স্থবির হয়ে গিয়েছি। এক সঙ্গে এত দিন ট্রেন বন্ধ!এর পরে লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়লে সমস্যা বাড়বে।’’

একই সমস্যায় বেহুলার আয়দার রঞ্জিত বণিক, হারানচন্দ্র সাধুখাঁ, বৈদ্যবাটীর অধীরচন্দ্র দেবনাথ, শেওড়াফুলির বাপি বিশ্বাসরা। অধীর এবং বাপি ট্রেনের কামরায় জল বিক্রি করেন। এখন তাঁদেরই চোখে জল। বৈদ্যবাটীর বৈদ্যপাড়ায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়াবাড়িতে থাকেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পুঁজি নেই। ব্যাঙ্কে টাকাও নেই। খাব কী? তার উপরে মাস ফুরোলে ঘরভাড়া দিতে হবে। দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমোতে পারছি না। সরকার পাশে না দাঁড়ালে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’’

বেহুলায় রেলের জমিতে টিনের ঘরে স্ত্রী, যুবক ছেলে এবং কিশোরী মেয়েকে নিয়ে হারানের সংসার। ট্রেনে বারো মাস ফল বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন দশা হবে, দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।’’’ রঞ্জিত বছর আটেক ধরে চিঁড়েভাজা, বাদাম, চালভাজা, চিপস্ বিক্রি করেন। স্ত্রী এবং নাবালক দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন। চিনা ভাইরাস তাঁদের ভাতে মারার কল করেছে। যুবকটির আর্তি, ‘‘সরকার যদি আমাদের জন্য চাল-আলুর বন্দোবস্ত করে, তা হলে দু’মুঠো খেতে পাই।’’

করোনা পরিস্থিতিতে অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য এককালীন এক হাজার টাকা অর্থসাহায্য করবে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অসীমরা বলছেন, এই প্রকল্পের দাক্ষিণ্য পেলে তাঁদের কিছুটা সুরাহা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন