Janata Curfew

পথে না নেমে সাড়া ‘জনতা কার্ফু’-তে

নির্মলের কথায়, ‘‘প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ব্যবসা করছি। শেষ কবে এ ভাবে সারা দিন ঘরে বসে কাটিয়েছি, মনে পড়ে না।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৫:১০
Share:

ফাঁকা: ঝাঁপ বন্ধ পান্ডুয়ার শতাধিক পুরনো একটি হাটের। ছবি: সুশান্ত সরকার

প্রতিদিন তাঁকে দেখা যায় পান্ডুয়ার তিন্নায় দোকানে বসে খদ্দের সামলাচ্ছেন। নির্মল কর্মকার নামে ওই মার্বে‌ল ব্যবসায়ী রবিবার দিনভর নিজেকে গৃহবন্দি রেখেছিলেন। করোনা মোকাবিলায় জন-বিচ্ছিন্ন থাকতেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত।

Advertisement

নির্মলের কথায়, ‘‘প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ব্যবসা করছি। শেষ কবে এ ভাবে সারা দিন ঘরে বসে কাটিয়েছি, মনে পড়ে না।’’ পরক্ষণেই জানিয়ে দেন, ‘‘মারাত্মক এই রোগ ঠেকাতে সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছি। দরকার হলে আরও কয়েকটা দিন দোকান বন্ধ করে বাড়িতে থাকব।’’ নির্মলের দু’টি দোকানে জনা কুড়ি কর্মী রয়েছেন। তাঁদেরও এ দিন ছুটি দিয়ে দেন তিনি।

নির্মল একটি উদাহরণ মাত্র। তাঁর মতোই বহু মানুষ রবিবার ঘরে স্বেচ্ছাবন্দি রইলেন। বন্ধ রইল বাজার-হাট। দোকানের ঝাঁপ বন্ধ রইল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘জনতা কার্ফু’তে হুগলি এবং হাওড়া জেলা কার্যত স্বতঃস্ফূর্ত বন্‌ধের চেহারা নিল। হুগলির উত্তরপাড়া থেকে শ্রীরামপুর, চন্দননগর থেকে চুঁচুড়া, পান্ডুয়া থেকে বলাগড়, চণ্ডীতলা থেকে তারকেশ্বর, আরামবাগ থেকে গোঘাট— সর্বত্রই এই ছবি দেখা গে‌ল। জিটি রোড, দিল্লি রোড, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, অহল্যাবাই রোড, অসম লিঙ্ক রোড— জেলার গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তাই ছিল সুনসান। সর্বত্রই ওষুধের দোকান অবশ্য খোলা ছিল। তবে ক্রেতা কার্যত ছিল না বললেই চলে। পান্ডুয়ায় রবিবারের সাপ্তাহিক হাট এ দিন বসেনি।

Advertisement

গঙ্গার বিভিন্ন ফেরিঘাটে পরিষেবা চালু থাকলেও লোকজন সে ভাবে চোখে পড়েনি। চন্দননগরের রানিঘাট এবং উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলের মধ্যে ফেরি চলাচল করেছে। চন্দননগরের পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘রাজ্যের জলপথ পরিবহণ সংস্থা গঙ্গায় ফেরি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। ফেরি বন্ধের কোনও নির্দেশিকা পাইনি। তাই চালু আছে।’’ গুপ্তিপাড়া-শান্তিপুর ফেরি পরিষেবা সকালের দিকে চালু থাকলেও যাত্রী না-হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সকাল থেকেই আরামবাগ শহর একেবারে সুনসান। বাস বা অন্য কোনও গাড়ি দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্‌ধেও আরামবাগের যে পুরাতন বাজার রীতিমতো খোলা থাকে, এ দিন তা-ও ছিল বন্ধ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্‌ধেও আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে কয়েকশো মানুষের ভিড় লেগে থাকে। এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখানে ২০-২৫ জনের বেশি মানুষের হদিশ মেলেনি। যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই প্রসূতির বাড়ির লোক। হাসপাতাল চত্বরে দীর্ঘদিন ক্যান্টিন চালান আশিস দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘জনতা কার্ফুতে যে সাড়া দেখছি, অতীতে কোনও দিন দেখিনি। খদ্দের না থাকায় প্রচুর খাবার নষ্ট হল। কিন্তু এতে কোনও খেদ নেই। এই কার্ফু দরকার ছিল।’’

হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় কোনও গাড়ি চলাচল করেনি বললেই চলে। কিছু সরকারি বাস চলেছে। তাও যাত্রী ছিল খুব কম। দোকান-বাজার বন্ধ ছিল। এখানকার বাসিন্দারাও নিজেদের গৃহবন্দি রেখেছিলেন। কেউ ঘর-সংসারের কাজ করে সময় কাটালেন। কেউ ডুব দিলেন বইয়ের জগতে। উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা তারকনাথ মেটে প্রাতর্ভ্রমণ কখনও বাদ দেন না। কিন্তু এ দিন চিন্তাও করেননি। তাঁর কথায়, ‘‘করোনা প্রতিরোধ করতে হলে নিজেকে যথাসম্ভব বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। আমি সে ভাবেই বিষয়টি দেখছি। হয়তো এর পর আমি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আর বাইরে বেরোব না।’’

উলুবেড়িয়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান, বাণীতবলার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বাজারটা রোজ নিজে হাতেই করেন। রবিবার বেরোননি। বই পড়ে কাটিয়েছেন। তাঁর অফিসে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। এ দিন অফিসও বন্ধ ছিল। যে দু’এক জন এসেছিলেন, তাঁদের জানালা দিয়েই মুখ বাড়িয়ে বলে দিয়েছেন, এ দিন আর বেরোবেন না। তিনি বলেন, ‘‘এ দিনের এই কর্মসূচির যিনিই ডাক দিন, আসল কথা হল ঘরবন্দি থাকা। এটাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।’’ উলুবেড়িয়ারই বাসিন্দা, নাট্যকার অনুপ চক্রবর্তী দু’দিন আগে থেকেই নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বয়স ষাটের উপরে। তাই ঝুঁকি নিইনি।’’

করোনা মোকাবিলায় এমন উদ্যোগে জরুরি, বলছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন