Coronavirus

বাজারে যেতে হাজার অজুহাত

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, লকডাউনকে যেন হালকা ভাবে না নেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাঁদের সতর্কতাবাণী বহু মানুষেরই কানে ঢুকছে না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০১:১৯
Share:

ভিড়ভাট্টা: শ্যামপুরের খাড়ুবাজারে। নিজস্ব চিত্র

লাঠির শাসন কমতেই বাজারে যাওয়ার ‘অজুহাত’ শুরু!

Advertisement

মানুষকে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য লকডাউনের প্রথম দু’দিন লাঠি হাতে ছুটে বেরিয়েছে পুলিশ। অনেকেরই ভয় ছিল, খাদ্যসামগ্রীতে টান পড়তে পারে। সে জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত করতে হবে। সেই ভয় এখন কেটেছে। বহু মানুষের বাড়িতে বেশ কিছু দিনের খাদ্যদ্রব্য মজুত। তা সত্ত্বেও আনাজ বা মুদি দোকানের জিনিস কেনাকেই অনেকে বাইরে বেরনোর ‘ছুতো’ হিসেবে ব্যবহার করছেন। পুলিশের হানা কমে যাওয়ায় অনেকেই বাইরে বেরিয়ে ‘হুজুগে’ মাতছেন বলে অভিযোগ।

ফলে, লকডাউনের উদ্দেশ্য কতটা রক্ষিত হচ্ছে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, লকডাউনকে যেন হালকা ভাবে না নেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাঁদের সতর্কতাবাণী বহু মানুষেরই কানে ঢুকছে না। ফলে, বাজার যেন ‘সামাজিক মিলনক্ষেত্র’ হয়ে দাঁড়াচ্ছে!

Advertisement

শনিবার জাঙ্গিপাড়া কৃষক মান্ডিতে আনাজ কিনতে ভিড় উপচে পড়ে। কেনাকাটার ক্ষেত্রে যে ন্যূনতম এক মিটার দূরত্ব রাখার কথা প্রশাসনের তরফে প্রচার করা হচ্ছে, তা রক্ষিত হয়নি।

আনাজের দোকানের উপরে কার্যত হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন সকলে। শেওড়াফুলিতে আনাজের হাটেও ভালই ভিড় ছিল। নালিকুল-বটত‌লাতেও ছিল একই ছবি। হরিপাল স্টেশন চত্বর, গোপীনগর প্রভৃতি জায়গায় বহু মানুষকে বাইরে দেখা গিয়েছে। হুগলি স্টেশন রোড, চুঁচুড়ার টালিখোলা-সহ বিভিন্ন জায়গাতেও একই পরিস্থিতি। গ্রামগঞ্জে অনেক জায়গায় খোলা চায়ের দোকানে যথারীতি আড্ডাও জমছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে মোটরবাইক নিয়ে কিছু যুবক বেরিয়ে পড়ছেন কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে।

চুঁচুড়ার বিধায়ক অসিত মজুমদার বলেন, ‘‘মানুষকে সতর্ক করতে লাগাতার মাইকে প্রচার করা হচ্ছে। তাতেও কিছু মানুষের যেন হুঁশ ফিরছে না। সবাইকে সচেতন হতে হবে।’’

কিছু দোকানি অবশ্য ‘হোম ডেলিভারি’র ব্যবস্থা করেছেন। সুশীল সাউ নামে উত্তরপাড়ার এক আনাজ বিক্রেতা বলেন, ‘‘অনেকের থেকে মোবাইলে জেনে নিচ্ছি কী কী আনাজ লাগবে। ভাইকে দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি বাড়িতে।’’ একই রাস্তা নিয়েছেন মাছ বিক্রেতা গোপা‌ল দাস। এমন উদাহরণ অবশ্য খুবই কম।

পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা দূরঅস্ত্‌, আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন বাজার যেন মেলা! শনিবার আরামবাগের পুরাতন সব্জি বাজার ঘিঞ্জি এলাকা থেকে সরিয়ে বয়েজ স্কুলের মাঠে সরানো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লকডাউনে ভিড় এড়ানোর নিয়ম না-মেনেই বিক্রিবাট্টা চলেছে। অনুগামীদের নিয়ে কিছু তৃণমূল নেতা বাজারে মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ার বি‌লি করতে যান। সেগুলি নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।

এ নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরাও উদ্বিগ্ন। এক পুলিশকর্মীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে অনুসরণ করে তাঁর দলের নেতারা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে। এতে বিপদ বাড়ছে।’’ এসডিপিও (আরামবাগ) নির্মলকুমার দাস বলেন, ‘‘যাঁরা লকডাউন বিধি ভাঙছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করছি আমরা। এই নিয়ে মাইকে প্রচার করা হবে। এরপরেও বিধিভঙ্গ করলে জামিনঅযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হবে।’’ এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রয়োজনে আমরা বাড়িতে গিয়ে মহিলাদের বলে আসব যাতে তাঁরা পুরুষদের বেরোতে না দেন। কয়েক দিনের বাজার যেন একদিনে করে রাখেন।’’

তুলনায় গ্রামীণ হাওড়ার বাজার-দোকানে ভিড় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ হয়েছে। বাগনান, উলুবেড়িয়ার বিভিন্ন বাজারে গণ্ডি কেটেই নিয়মের মধ্যে আনা গিয়েছে ক্রেতাদের। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষ বাজারে আসেন। নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, সে দিকে পুলিশের সজাগ দৃষ্টি ছিল। মুদিখানা, ওষুধের দোকানেও একই ব্যবস্থা করা হয়। ফলে, শনিবার বাজার-দোকানে ভিড় থাকলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অনেকাংশেই সম্ভব হয়েছে। শ্যামপুরের খাড়ুবেড়িয়া বাজার-সহ কিছু জায়গায় অবশ্য এর অন্যথা হয়েছে। সেখানে যথাযথ ভাবে নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বাগনানে যান রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র। বাগনান বাসস্ট্যান্ড চত্বরে কয়েকজন দোকানদারের সঙ্গে কথা বলেন। জিনিসপত্র জোগানের ব্যাপারে কী সমস্যা হচ্ছে, সেই বিষয়টি ডিজি-কে জানান ব্যবসায়ীরা। ডিজি তাঁদের আশ্বস্ত করেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘কালোবাজারি যাতে না হয়, তা দেখা হচ্ছে। জিনিসপত্রের সরবরাহ অব্যাহত রাখা হয়েছে।’’

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন