প্রতীকী ছবি।
আমপানে যাঁদের ঘরবাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি, পাঁচলায় তাঁদের অনেকে ক্ষতিপূরণ পেয়ে গিয়েছেন। এতে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগে কিছুদিন ধরেই সরব বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত নন, অথচ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, এমন গ্রামবাসীদের থেকে সেই টাকা ফেরত নিয়ে তা বঞ্চিত এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল শাসিত পাঁচলা পঞ্চায়েত সমিতি। চাপে পড়েই এই সিদ্ধান্ত বলে বিরোধীদের দাবি।
বৃহস্পতিবার সমিতির অর্থ সংক্রান্ত স্থায়ী সমিতিতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমিতির কর্তারা জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রকাশের পরে নানা মহল থেকে অভিযোগ আসে, ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন কিছু নাম তাতে ঢুকেছে। তাঁরা টাকাও পেয়ে গিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে সেই টাকা ফেরত নেওয়া হবে। তালিকার নাম ধরে ফের তদন্ত হবে। সেই টাকা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ জন্য তাঁদের কাছ থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে।
তবে, তালিকা তৈরিতে দুর্নীতি বা স্বজনপোষণের অভিযোগ মানেননি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল। তাঁর দাবি, ‘‘আমপানের পরে বহু মানুষ বাড়ি তৈরির ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করেন। ঝড়ে সব রকম যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে, আবেদনপত্রগুলি সরেজমিনে খতিয়ে দেখার কাজ সঠিক ভাবে করা যায়নি। সেই ঘাটতি থাকার ফলেই ক্ষতিগ্রস্ত নন, এমন কিছু নাম ঢুকে পড়ে তালিকায়। বাদ পড়েন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তেরা। এর সঙ্গে দুর্নীতি-স্বজনপোষণের সম্পর্ক নেই।’’
কী ভাবে আদায় করা হবে ভুয়ো ক্ষতিপূরণের টাকা? সমিতি সূত্রের খবর, তদন্তের পরে তাদের পক্ষ থেকে যাঁদের বাড়ির কোনও ক্ষতি হয়নি, অথচ ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তাঁদের কাছে স্বেচ্ছায় টাকা ফেরত দিতে আবেদন করা হবে। সমিতির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও তাঁদের কাছে পাঠানো হবে। সেই অ্যাকাউন্টে
টাকা ফেরত দেওয়া যাবে। স্বেচ্ছায় যদি কেউ টাকা ফেরত না-দেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন টাকা ফেরত দিতে চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন বলে সমিতির কর্তাদের দাবি।
আমপানের ধাক্কায় পাঁচলায় বহু বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ক্ষতিপূরণ বিলি শুরু হতেই বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, পঞ্চায়েত
সমিতি এবং বিভিন্ন পঞ্চায়েতের শাসকদলের বহু বর্তমান এবং প্রাক্তন কর্তাদের নাম তালিকায় রয়েছে। একই পরিবারের একাধিক সদস্যের নামও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায়
আছে, যাঁরা আদৌ ক্ষতিগ্রস্ত নন। অথচ, অনেক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষতিপূরণ পাননি।
এই সব অভিযোগ নিয়ে শুক্রবার বিজেপির পক্ষ থেকে পাঁচলা ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘‘আমপানে বাড়ি তৈরির ক্ষতিপূরণে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করার প্রতিবাদে আমরা রাস্তায় নামব। আগামী বছর বিধানসভা ভোট। ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মনে যে ক্ষত হয়েছে, তা মেরামত করতে চাপে পড়েই সমিতি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করল।’’
অবশ্য শুধু পাঁচলা নয়, আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলি নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠেছে। পাঁচলার পাশের ব্লক সাঁকরাইলেও একই অভিযোগ ওঠায় তদন্ত করছে জেলা প্রশাসন।