বরাদ্দ কম, সমস্যা বিলি নিয়ে

গত বন্যায় হুগলি জেলায় মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে জন্য দু’দফায় টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। প্রথম দফার টাকা বরাদ্দ হয় গত ডিসেম্বর মাসে। সম্প্রতি বাকি এক দফার টাকা বরাদ্দ হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আরামবাগ শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০১:২১
Share:

গত বন্যায় হুগলি জেলায় মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে জন্য দু’দফায় টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। প্রথম দফার টাকা বরাদ্দ হয় গত ডিসেম্বর মাসে। সম্প্রতি বাকি এক দফার টাকা বরাদ্দ হয়। তবে দু’দফা মিলিয়ে ক্ষতির এলাকা অনুপাতে তা যৎসামান্য বলে দাবি চাষিদের। বরাদ্দের পরিমাণ নিয়ে যেমন মাছ চাষিদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে, তেমনি ব্লক মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক এবং পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তারও সঙ্কটে পড়েছেন। কারণ, কাকে বাদ দিয়ে কাকে ক্ষতিপূরণ দেবেন তা নিয়ে। হুগলি জেলা মৎস্য অধিকর্তা পার্থ কুণ্ডু বলেন, ‘‘ক্ষতির এলাকা জানিয়ে ক্ষতিপূরণ বাবদ কত টাকা প্রয়োজন তা বলা হয়েছিল। দু’দফায় প্রায় ৪ হাজার ইউনিটের বরাদ্দ পেয়েছি। সেটাই বিভিন্ন ব্লক এলাকায় বন্টন করা হচ্ছে।’’ এক ইউনিট মানে ১ বিঘা জল এলাকা বলে ব্যাখ্যা করেন পার্থবাবু।

Advertisement

কিন্তু সমস্যা কোথায়?

জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে জানা যায়, এই জেলায় মাছ চাষে ক্ষতির এলাকা মোট ৭৫০০ হেক্টর। যা ৫৬,২৫০ বিঘা জলাশয়। গত ডিসেম্বর মাসে রাজ্য সরকার প্রথম দফায় ক্ষতিপূরণ বরাদ্দ করে মাত্র ২৮০৭ বিঘা এলাকার জন্য টাকা বরাদ্দ করেছিল। সম্প্রতি আরও ১,১২২ বিঘা এলাকার জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়া গিয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৬,২৫০ বিঘা জলাশয়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণ মিলছে মাত্র ৩,৯২৯ বিঘা জল এলাকা বা ৩,৯২৯ ইউনিটের। এক ইউনিট পিছু ৫৫০০ টাকা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য নগদ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। এক ইউনিট বা বিঘার জন্য বরাদ্দ ওই টাকায় থাকছে ১ হাজার করে মাছের চারা। চারা প্রতি মূল্য ৫ টাকা। মোট ৫ হাজার টাকা। আর ৩০ কেজি চুন। যার মূল্য ৩০০ টাকা এবং বাকি ২০০ টাকা বহন খরচ।

Advertisement

বন্যা এবং অতিবৃষ্টির কারণে জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকগুলির মধ্যে আরামবাগ মহকুমার খানাকুলের দু’টি ব্লক আছে (আরামবাগ ব্লক এবং পুড়শুড়া ব্লক)। গত বন্যায় শুধু খানাকুলের দু’টি ব্লক এলাকায় প্রায় ১৮০০ হেক্টর পুকুর প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে গিয়েছে। সরকারি হিসেবেই দু’ব্লকে মাছ চাষে ক্ষতির অঙ্ক মোট ছিল প্রায় ১৭ কোটি টাকা। জেলার বিভিন্ন ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ক্ষতিপূরণ এতই কম যে বন্টন নিয়ে সমস্যার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সেই সঙ্কট কাটাতে স্থায়ী সমিতির বৈঠক ডেকে ক্ষতিপূরণ বন্টন প্রক্রিয়ায় কাদের আগ্রাধিকার দেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ক্ষতিপূরণের এই ব্যবস্থা নিয়ে মাছ চাষিরা গত ডিসেম্বর মাস থেকেই ফুঁসছেন। খানাকুল ২ ব্লকের চিংড়া গ্রামের এক মাছ চাষি সনৎ রায়ের ক্ষোভ, ‘‘ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের সরকারি বন্দোবস্তটা মাছ চাষিদের সঙ্গে রসিকতা ছাড়া কিছুই নয়।’’ খানাকুল ১ নম্বর ব্লকের ঘোষপুরের এক মাছ চাষির ক্ষোভ, টা শুধু কিছু রাজনৈতিক দলের লোককে মাছ চাষি দেখিয়ে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হবে। আর ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে সরকারের সদিচ্ছা বিষয়ে সাধারণ মানুষকে ভাঁওতা দেওয়া ছাড়া কিছু নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন