অঙ্গীকার সার, দানের দেহ দাহ আগুনেই 

দশমীর বিকেলে শ্রীরামপুরের এক বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের লোকজন চেষ্টা করেও দেহদান করতে না-পারায় এই প্রশ্নই ফের সামনে এল। অনেকেরই অভিজ্ঞতা, ছুটির দিনে বা সন্ধ্যার পরে দেহদান করতে গিয়ে রীতিমতো নাজেহাল হতে হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:০৪
Share:

প্রতীকী চিত্র।

দেহদানের অঙ্গীকার করা থাকলে ‘অসময়ে’ মারা গেলে চলবে না!

Advertisement

দশমীর বিকেলে শ্রীরামপুরের এক বৃদ্ধার মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের লোকজন চেষ্টা করেও দেহদান করতে না-পারায় এই প্রশ্নই ফের সামনে এল। অনেকেরই অভিজ্ঞতা, ছুটির দিনে বা সন্ধ্যার পরে দেহদান করতে গিয়ে রীতিমতো নাজেহাল হতে হয়।

মাহেশের সদ্‌গোপপাড়ার বাসিন্দা সবিতা মজুমদার (৭৮) বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁকে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। দশমীর বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ সেখানেই তিনি মারা যান। তিনি দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন।

Advertisement

মৃত্যুর পরে দেহ কোনও মেডিক্যা‌ল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হ‌ন বাড়ির লোকেরা। যে সংস্থার মাধ্যমে সবিতাদেবী দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। এরপরে কলকাতার এনআরএস হাসপাতাল, কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম — সব জায়গায় যোগাযোগ করেও নিরাশ হয়ে সবিতাদেবীর দেহ সৎকার করে দেন পরিবারের লোকেরা।

সবিতাদেবীর জামাই দিলীপ সরকার বলেন, ‘‘দেহদানের ক্ষেত্রে বাড়ির লোকজনকে এত কাঠখড় পোহাতে হবে কেন? এই পরিস্থিতি হয় শুনেছি বলেই আগে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। যা অভিজ্ঞতা হল, উৎসাহ হারালাম।’’

শ্রমজীবী হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে রাতে এক জনের দেহ দান করতে পেরেছিলাম রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তার হস্তক্ষেপে। কিন্তু এমনটা হবে কেন? কেন ২৪ ঘণ্টা দেহ সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকবে না? একটা পরিকাঠামো গড়া হোক, যাতে দেহদান করতে সমস্যা না হয়। একে-তাকে ধরতে না হয়।’’

সবিতাদেবীর পরিবার সূত্রে দাবি, মৃত্যুর পরে সবিতাদেবীর দেহদান করার জন্য প্রথমে যে সংস্থায় তাঁরা যোগযোগ করেছিলেন, সেখান থেকে জানানো হয়— দশমীতে কোনও সাহায্য করা যাবে না। তাঁরা ‘পিস হাভেন’-এ দেহ রাখতে পারেন। এর পরে এনআরএস হাসপাতাল এবং কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁরা ব্যর্থ হন। শেষে এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করা হয়। সেখান থেকে বলা হয়, অ্যানাটমি বিভাগে দেহ গ্রহণ করার কেউ নেই।

তাঁরা হাসপাতালের মর্গে দেহ রেখে দিতে পারেন। পরের দিন দেহ অ্যানাটমি বিভাগে নিয়ে নেওয়া হবে।

সবিতাদেবীর বড় মেয়ে পূর্ণা সরকার বলেন, ‘‘বিকেল থেকে চেষ্টা করে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও আমরা অ্যানাটমি বিভাগে দেহ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা পাইনি।

ততক্ষণে বিসর্জনের জন্য রাস্তায় প্রচুর ভিড় হয়ে গিয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে দেহ দাহ করে দিই আমরা।

মর্গে কেন দেহ রাখতে যাব?’’

চক্ষুদান ও দেহদান নিয়ে কাজ করা ‘রাজবলহাট কালচারাল সোসাইটি ও সেবায়ন’-এর সদস্য সুরজিৎ শীল বলেন, ‘‘দেহদানের মতো মহৎ কাজে অনেকেই ভাবেন, খুব সুন্দর ভাবে দেহ গ্রহণ করা হবে।

কিন্তু তা হয় না। ছ’টি দেহদানের ক্ষেত্রে জড়িত ছিলাম। চারটি ক্ষেত্রে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কখনও ছুটির দিন, কখনও অফিস টাইম পেরিয়ে যাওয়ায়

সমস্যা হয়েছে।’’

দেহদান করতে না পারলেও শ্রীরামপুর সেবাকেন্দ্র ও চক্ষুব্যাঙ্কের মাধ্যমে সবিতাদেবীর চোখ দু’টি সরকারি হাসপাতালে দান করতে পেরেছেন বাড়ির লোকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন