Howrah Hooghly News

ডেঙ্গি প্রতিরোধে তৎপর শ্রীরামপুর, সাফাই নিয়ে সংশয় থাকছেই

এক বছর আগের অভিজ্ঞতা যাতে ফিরে না আসে, সে জন্য এ ভাবেই মশার পিছু ধাওয়া করে আনাচে-কানাচে পৌঁছতে চাইছে শ্রীরামপুর পুরসভা। তার উপর গুড়াপে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভাগুলিকে সতর্ক করেছেন।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ০২:১১
Share:

তৎপরতা: ছড়ানো হচ্ছে কীটনাশক। —নিজস্ব চিত্র

পড়ন্ত বিকেলে মাহেশের সদগোপপাড়ায় সরু গলির ‌নর্দমায় মশার লার্ভা মারার স্প্রে-মেশিন নিয়ে গজগজ করছিলেন‌ যুবকটি। তাঁর অনুযোগ, ‘‘এত সরু জায়গায় একটা মানুষ ঢুকতে পারে! স্প্রে করব কী করে!’’ কিন্তু উপর মহলের নির্দেশ— যতটা যাওয়া যায়, মশা নিধন করে আসতে হবে।

Advertisement

এক বছর আগের অভিজ্ঞতা যাতে ফিরে না আসে, সে জন্য এ ভাবেই মশার পিছু ধাওয়া করে আনাচে-কানাচে পৌঁছতে চাইছে শ্রীরামপুর পুরসভা। তার উপর গুড়াপে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরসভাগুলিকে সতর্ক করেছেন।

২০১৬ সালে শ্রীরামপুরে বিস্তীর্ণ এলাকায় ডেঙ্গি ছেয়ে গিয়েছিল। অন্তত চার জনের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরাল হয়েছিল যে, স্বাস্থ্য দফতর শ্রীরামপুরে ‘ডেঙ্গি-মহামারি’ ঘোষণা করে। ওই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে গত বছর আগেভাগেই ডেঙ্গি প্রতিরোধে অভিযানে নেমেছিল পুরসভা। তার সুফলও মেলে। ডেঙ্গি সে ভাবে ছড়ায়নি।

Advertisement

পুরসভার দাবি, ডেঙ্গি-দমনে এ বারেও ঢের আগেই তারা কোমর বেঁধেছে। জানুয়ারি মাস থেকে বাড়ি-বাড়ি অভিযান চলছে। এই কাজে মোট ১৫২টি ‘দল’ (প্রতি দলে ২ জন) নামানো হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি আরও কিছু মহিলা এই কাজে নামানো হচ্ছে। প্রতি বাড়িতে তাঁরা জ্বরের তথ্য সংগ্রহ করছেন। বাড়ির আশপাশে জঞ্জাল বা বদ্ধ নর্দমা দেখলে তা পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। জল জমে থাকতে দেখলে সতর্ক করা হচ্ছে। সাফাইয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। তেল-ব্লিচিং ছড়ানো হচ্ছে।

পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল গৌরমোহন দে জানান, প্রতি মাসে ১০ দিন ওই কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। সকালে বাড়ি-বাড়ি অভিযান চলছে। বদ্ধ-নর্দমা দেখলে বা সাফাইয়ের প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে জানানো হচ্ছে। বিকেলে চলছে সাফাই, রাসায়নিক স্প্রে। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ওই কাজ হয়েছে। নজরদারির জন্য গত বছর ‘ফ্যামিলি কার্ড’ চালু করা হয়েছি‌ল। প্রতি মাসে পুরকর্মীরা সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যদের জ্বরের তথ্য তাতে লিখে রাখছিলেন। এ বারেও এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ওই কার্ডের মাধ্যমে নজরদারি রাখা হবে। পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর থাকবে পুরসভার। কোনও শিথিলতা করা হবে না।’’

প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সাফাইয়ের উপরও জোর দেন। সেখানে অবশ্য শ্রীরামপুর কতটা ভাল নম্বর পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বছর খানেক ধরে বাঁশি বাজিয়ে পুরকর্মীরা বাড়ি থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে সর্বত্র ওই কাজ ভা‌ল ভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ। রাজা কে এল গোস্বামী স্ট্রিটের বাসিন্দা সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের এলাকা এখনও জঞ্জালমুক্ত নয়। পুর-কর্তৃপক্ষকে বাসিন্দাদের তরফে এ নিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল।’’ বিভিন্ন রাস্তার ধারে আবর্জনার স্তূপ। জিতেন্দ্রনাথ লাহিড়ি রোড, সতীশচন্দ্র ঘোষ লেন-সহ নানা জায়গায় এমনই ছবি দেখা গেল। সংস্কারের অভাবে বেহাল পুকুর।

পুরকর্তাদের বক্তব্য, অনেক জায়গায় বাসিন্দারাই যখন খুশি বাড়ির নোংরা রাস্তায় ফেলেন। আর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পুকুর সংস্কার নিয়েও পুরসভা সমস্যায়। কেননা, পুরসভার আবেদন সত্ত্বেও পুকুর-মালিক সংস্কার করছেন না।

শহরবাসী বলছেন, সার্বিক পরিস্থিতি আগের থেকে পরিস্থিতি ভাল হয়েছে। তবে এখনও অনেকদূর যেতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন