দুই জেলাতেই গাড়ির ছাদে চেপে ঝুঁকির যাতায়াত দেখেও দেখে না প্রশাসন

শিয়রে বিপদ

Advertisement

তাপস ঘোষ

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৪
Share:

প্রাণহানির নজির রয়েছে। রয়েছে নিষেধাজ্ঞাও। তবু পুলিশ প্রশাসনের চোখের সামনেই হুগলি জেলার একাংশে, মূলত গ্রামীণ এলাকায় বাসের ছাদে যাত্রী তোলার প্রবণতা বন্ধ হচ্ছে না।

Advertisement

গত ২৭ জুন রাতে চুঁচুড়া-ধনেখালি রুটের একটি বাসের ছাদে চড়ে যাওয়ার সময়ে চুঁচুড়া স্টেশনের কাছে রেলের গলাপুলের লোহার ব্যারিকেডে ধাক্কা খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল এক যুবকের। আগেও এমন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর নজির রয়েছে। দেখা গিয়েছে, এ জাতীয় দুর্ঘটনার পরে পুলিশের নজরদারি, তৎপরতা বাড়ে। তার পর কিছুদিনের মধ্যেই সেই নজরদারিতে ভাটা পড়ে। বুধবার সকালে ব্যান্ডেল মোড়ে ফের একটি বাসের ছাদে দেখা গেল এক যাত্রীকে! সামনে পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়ার। কিন্তু তাঁরা দেখেও দেখলেন না বলে অভিযোগ।

জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অধিকর্তা শুভেন্দুশেখর দাস ওই প্রবণতা বন্ধ না-হওয়ার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, দফতর এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতন শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। অভিযান চালিয়ে বাসের ছাদে ওঠার মই বা কাঠের ডালা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সে সব খুলে ফেলতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এখনও বাসের মাথায় যাত্রীরা উঠছেন, এটা ঠিকই। কিছুদিনের মধ্যেই লাগাতার অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সেই সিদ্ধান্ত কবে কার্যকর হবে এবং তার আগে দুর্ঘটনা বা প্রাণহানি কী ভাবে এড়ানো যাবে, এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। গ্রামীণ হুগলির বহু বাসযাত্রী মনে করছেন, বাস-মালিক এবং চালক-কন্ডাক্টরদের সচেতনতা না-বাড়লে এই প্রবণতা রোধ করা যাবে না। চুঁচুড়া-তারকেশ্বর, চুঁচুড়া-ধনেখালি, চুঁচুড়া-হরিপাল রুটের বহু বাসের ছাদেই যাত্রী তোলা হয় বলে অভিযোগ।

কেন বাসের ছাদে ওঠেন যাত্রীরা?

যাত্রীদেরই একাংশ মনে করছেন, যে হেতু গ্রামীণ এলাকায় বাসের সংখ্যা কম এবং একই রুটের দু’টি বাস ছাড়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেশি থাকে, তাই ভিড় হয়। একটু আরামে যাওয়ার জন্য বাসের ছাদেই উঠে পড়েন কেউ কেউ। চালকও আপত্তি করেন না। সদানন্দ মুর্মু নামে দাদপুরের এক বাসযাত্রী বলেন, ‘‘বাসের ছাদে ওঠার সময়ে কেউ হয়তো দুর্ঘটনার কথা ভাবেন না। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ না-করলে কোনও দিন ছবিটা পাল্টাবে না।’’

বাস-চালকেরা কিন্তু দায় চাপিয়েছেন যাত্রীদের ঘাড়েই। তাঁদের দাবি, যাত্রীরা বারণ না-শুনে এক রকম জোর করেই ছাদে উঠে পড়েন। চুঁচুড়া-হরিপাল রুটের এক বাস-চালক বলেন, ‘‘কিছু লোক স্বভাবে ওঠেন। কিছু লোক আবার ভাড়া না-দেওয়ার মতলবে। বারণ করলেও শোনেন না। পুলিশ আমাদেরই ‘কেস’ দেয়।’’ চুঁচুড়া-হরিপালেরই অন্য একটি রুটের বাস-চালক অসিত মাঝি বলেন, ‘‘আমরা মাঝেমধ্যে রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ছাদ থেকে নামতে বলি। কিন্তু তখন গালিগালাজ শুনতে হয়।’’ জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সংগঠনের এক কর্তা জানান, বাসের মাথা থেকে ডালা খোলা শুরু হয়েছে। তবু এখনও কিছু লোক উঠছেন। এটা বন্ধ করার উপায় খোঁজা হচ্ছে।

কী করছে পুলিশ?

চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, মাঝেমধ্যেই অভিযান চালিয়ে বাসের ছাদ থেকে যাত্রী নামানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ দেখলে বাসের ছাদে যাত্রীরা শুয়েও পড়েন। তখন বোঝা যায় না। দুর্ঘটনা এড়াতে এখন বাসের ছাদে ডালা বা মই লাগানো হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। একই দাবি, জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের কর্তাদেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন