ভোট-বাজারে ভাটা রক্তের জোগানে

জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা বিজলি পাত্রের ডায়ালিসিস চলে শ্রমজীবী হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে রক্ত না-পাওয়ায় ক’দিন আগে তাঁর দাদা পার্থ হন্যে হয়ে ঘুরেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৪
Share:

ছবি: পিক্সাবে।

দিন কয়েক আগের কথা। চন্দননগর হাসপাতালে এক রোগীর এ-পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন। রক্ত পেতে কালঘাম ছোটে বাড়ির লোকের। কারণ, হাসপাতালের ব্লাড-ব্যাঙ্ক প্রায় খালি। হাসপাতালের কর্মীরা ক্যাম্প করে রক্ত দেন। বেঁচে যান রোগী।

Advertisement

কিছুদিন ধরে শ্রীরামপুরের শ্রমজীবী হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরাও একই রাস্তা ধরেছেন। ব্লাড-ব্যাঙ্ক সচল রাখতে তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে হাসপাতালে শিবির করছেন।

লোকসভা ভোটের প্রচার বাড়ছে। বাড়ছে গরমও। জোড়া ধাক্কায় রক্তের জোগান কমছে হুগলিতে। চন্দননগর হাসপাতাল, শ্রমজীবী-সহ জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের ব্লাড-ব্যাঙ্কে রক্তে টান পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে নাকাল হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছেন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারাও।

Advertisement

আজ কোথায় কোথায় ভোট, দেখে নিন

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রের খবর, শীতকালে রক্তদান শিবির বেশি হয়। হুগলিতে তিনটি মহকুমা হাসপাতাল এবং চুঁচুড়া ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালের উদ্যোগে গড়ে ১৫-১৬টি করে। গরমে সেই সংখ্যা কমে আসে। এ বার সঙ্গে ভোট। ফলে, শিবির আয়োজনে ভাটা পড়েছে। কারণ, ওই সব শিবির আয়োজনের উদ্যোক্তা হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ক্লাব বা সংগঠন। কিন্তু ক্লাব-সংগঠনের সদস্যদের একাংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক হওয়ায় তাঁরা ভোটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আবার ভোটের কাজে ডাক পড়েছে সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদেরও। তাই রক্তদান শিবির আয়োজন গতি হারিয়েছে।

শিবির কম হওয়ায় আর কিছুদিন পর থেকে রক্তের জোগান আরও কমতে পারে বলে মনে করছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তীও। তিনি বলেন, ‘‘আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে, পরে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে শিবির করতে হবে।’’

জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা বিজলি পাত্রের ডায়ালিসিস চলে শ্রমজীবী হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে রক্ত না-পাওয়ায় ক’দিন আগে তাঁর দাদা পার্থ হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। শেষে শ্রমজীবীর কর্মীরাই রক্ত দিতে এগিয়ে আসেন। মঙ্গলবারও সেখানকার কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘনিষ্ঠ-পরিচিত অন্তত ৪০ জন রক্ত দেন। হাসপাতালের কর্ণধার ফণীগোপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের ব্ল্যাড-ব্যাঙ্কে ৯০০ ইউনিট রক্ত রাখা যায়। গড়ে প্রতি মাসে রক্তের ৭-৮টা ক্যাম্প করা হয়। কিন্তু ভোটের কারণে দু’টি ক্যাম্প এ বার বাতিল হয়েছে। কর্মীরাই পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। ক্যাম্প করছি।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

চন্দননগর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের ব্লাড-ব্যাঙ্কে ৬০০ ইউনিট রক্ত রাখা যায়। তবে এই মুহূর্তে অনেকটাই কম রয়েছে। সঙ্কট বাড়ার আশঙ্কা করছেন কর্তৃপক্ষ। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে গরমে প্রতি মাসে ১২-১৩টি ক্যাম্প হয়। ইতিমধ্যেই একটি বাতিল হয়েছে। হাসপাতালের সুপার কমলকিশোর সিংহ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবছি।’’ জেলা সদর চুঁচুড়ায় হাসপাতালে গড়ে প্রতি মাসে ৯টা ক্যাম্প হয়। হাসপাতালে মোট ৩০০ ইউনিট রক্ত রাখা যায়। উজ্জেলেন্দু বিকাশ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করা যায় ভাবছি।’’

আপাতত কিছুটা ভাল অবস্থায় রয়েছে আরামবাগ হাসপাতাল। সেখানে ব্লাড-ব্যাঙ্কে ৬০০ ইউনিট রক্ত ধরে। মঙ্গলবার ছিল ২২৩ ইউনিট। তবে, জেলায় ভোট একেবারে দোরগোড়ায় চলে এলে যে রক্তদান শিবির করা যাবে না, তা মানছেন হাসপাতালের সুপার শিশির নস্কর। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি সপ্তাহে আমরা চারটি করে ক্যাম্প করি। গড়ে ৬০ ইউনিট রক্ত পাওয়া যায়। তবে, আর কিছুদিন বাদে হয়তো ক্যাম্প করতে না-পারার জন্য রক্তে টান পড়বে। তখন স্বাস্থ্যকর্মীরাই রক্ত দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন