বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেল

ভাবাদিঘির পর সমস্যা অমরপুরে

শুধু ভাবাদিঘি নয়। বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেলপথের জটকে আরও জটিল করে তুলেছে গোঘাটেরই পশ্চিম অমরপুর। ভাবাদিঘি থেকে যার দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

গোঘাট শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৭ ০২:১৯
Share:

শুধু ভাবাদিঘি নয়। বিষ্ণুপুর-তারকেশ্বর রেলপথের জটকে আরও জটিল করে তুলেছে গোঘাটেরই পশ্চিম অমরপুর। ভাবাদিঘি থেকে যার দূরত্ব মাত্র ৭ কিলোমিটার।

Advertisement

ভাবাদিঘি বাঁচাতে আন্দোলনে নেমেছে ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’। একই ভাবে পশ্চিম অমরপুরেও ‘রেল চালাও, গ্রাম বাঁচাও’ কমিটি গড়ে আন্দোলনে নেমেছেন এলাকার মানুষ। ভাবাদিঘি নিয়ে ইতিমধ্যেই হস্তক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিম অমরপুরের মানুষও চান সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসুক প্রশাসন। ভাবাদিঘিতে দিঘির একাংশ বুজিয়ে লাইন পাতার বিরুদ্ধে মানুষ। পশ্চিম অমরপুরের বাসিন্দাদের বক্তব্য, রেল লাইন পাতা হলে বন্যার জল নিকাশির ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তাঁদের দাবি, বন্যার জল বের হওয়ার জন্য অন্তত ১ কিলোমিটার অংশের পুরোটাই সেতু করে তার উপর লাইন পাতা হোক। যদিও রেলের দাবি, ওই অংশে সেতুর কোনও প্রয়োজন নেই। বিষয়টি নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন যৌথভাবে গ্রামবাসীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করলেও গ্রামবাসীরা সেতুর দাবিতে অনড়। যে কারণে, রেল লাইন পাতার জন্য জমি অধিগ্রহণ হলেও এখানকার একজন জমিদাতাও চেক নেননি। এই পরিস্থিতে এখানেও কাজ শুরুই করতে পারেনি রেল।

‘রেল চালাও, গ্রাম বাঁচাও’ কমিটির সম্পাদক ফটিক কাইতির অভিযোগ, ‘‘ভাবাদিঘির চেয়ে আমাদের সমস্যা আরও বড়। পুরো এলাকাটি সমতল থেকে অন্তত পাঁচ ফুট নিচু। পশ্চিম অমরপুর মৌজায় অধিগৃহীত জমির উপর উঁচু বাঁধ দিয়ে রেললাইন পাতা হলে পশ্চিম অমরপুর গ্রাম-সহ তাজপুর, আনুড়, নদীপাড়া, নদীকুল, হরিশোভা, দেবখণ্ড, সিংরাপুর প্রভৃতি ১০-১২টি গ্রামের নিকাশি ব্যবস্থা বলে কিছু থাকবে না। বর্ষায় বা বন্যা হলে প্লাবিত হবে এলাকা। তাই আমাদের দাবি, নিকাশির ব্যবস্থা বিপর্যস্ত না করে ওই জলা জায়গায় সেতু বা অন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেল লাইন পাতা হোক।’’ তাঁদের এই আন্দোলন অযৌক্তিক কিনা তা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ সংগঠনকে দিয়ে যাচাইয়ের কথাও বলেছেন তিনি।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম অমরপুর গ্রামের উত্তর দিকে আমোদর নদ। ওই নদে বয়ে আসা বাঁকুড়া জেলার ও কংসাবতীর জলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয় প্রতি বছর।

পূর্বরেল সূত্রে খবর, অমরপুর মৌজার প্রায় ১৮০ জন চাষির ১৩.১ একর জমি রয়েছে রেলের প্রস্তাবিত পথে। এর অধিকাংশই তিন ফসলি জমি। ২০১০ সালে শুনানিতে জমির মূল্য ধার্য হয় কাঠাপিছু ১৪ হাজার ৬৫০ টাকা। অমরপুরের চাষিরা জমির ‘ন্যায্য দামের’ দাবিতে ২০১০ সালের ২০ জুন ‘রেল চালাও, গ্রাম বাঁচাও’ কমিটি গঠন করে জমির দাম কাঠা পিছু ন্যূনতম ৭৫ হাজার টাকা দাবি করেন। দাবি পূরণ না হলে তাঁরা ক্ষতিপূরণের চেকও নেবেন না বলে জানান। গত ১৬ মার্চ জেলা প্রশাসন এবং রেলের তরফে পশ্চিম অমরপুরের অনিচ্ছুকদের ব্লক অফিসে ডেকে শুনানি হয়। সেখানে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) পূর্ণেন্দু মাজি জমির বাজার দরের সরকারি নথি দেখিয়ে জানান, জমির দাম বাড়ানোর কোনও সুযোগ নেই।

এর পরেই জমিদাতারা জমির দাম নিয়ে আলোচনা থেকে সরে এসে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার সুরাহার দাবিতে এক কিলোমিটার অংশে সেতুর দাবি জানান। রেলের বক্তব্য নস্যাৎ করে কমিটির সম্পাদক ফটিক কাইতি বলেন, “২০১০ সাল থেকে আমরা লিখিতভাবে পূর্ব রেলের কাছে মূলত তিনটি দাবি জানিয়ে আসছি। ১) অধিগৃহীত জমির সঠিক মূল্য নির্ধারণ। ২) বর্ষা এবং বন্যার জল নিকাশির সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ৩) রেল লাইনের ফলে দু’ভাগে ভাগ হওয়া মাঠের দক্ষিণ দিক থেকে ফসল উত্তর দিকে আনতে যাতায়াতের সুব্যবস্থা।

গত ২৬ মার্চ বিষয়টি সমস্যাটি সবেজমিন দেখার জন্য রেলের লোকজনের যাওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত কেউই যাননি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাঁদের আশঙ্কা, আশঙ্কা ভাবাদিঘির মতো তাঁদের উপরেও রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক জুলুম হতে পারে।

ভাবাদিঘি এবং পশ্চিম অমরপুরের সমস্যা নিয়ে ওই অংশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ব রেলের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার সুনীলকুমার যাদব বলেন, “রাজ্য সরকার স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। সমস্যা মিটলে তবেই কাজ শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন