ভক্ত: জানলা-দরজা, দেওয়াল সবই লাল-হলুদ।
বাড়ি না ইস্টবেঙ্গল তাঁবু!
ডানকুনির কালীপুরের পূর্বাশা এলাকায় নতুন তৈরি একতলা বাড়িটা দেখে পথচারীদের অনেকেই থমকাচ্ছেন। বাড়ির বাইরে লাল-হলুদ রং। ভিতরেও তাই। জানলা-দরজার পর্দাও লাল-হলুদ!
চমক আরও আছে।
বাড়ির ফলকে শোভা পাচ্ছে— ‘ইস্টবেঙ্গল ভিলা’। সামনে লেখা— ‘হৃদয় জুড়ে শুধুই ইস্টবেঙ্গল’। দলের লোগো? তা-ও জ্বলজ্বল করছে দেওয়ালে!
ব্যাপার কী?
‘‘আমি মনেপ্রাণে লাল-হলুদ সমর্থক। ছেলেও তাই। ছেলেই প্রথম বাড়িটাকে লাল-হলুদ করার কথা বলে। দ্বিতীয় বার আর ভাবিনি’’— বলছেন গৃহকর্তা, রেলকর্মী তপন ভৌমিক। রবিবার ছিল তাঁদের গৃহপ্রবেশ। ফিতে কেটে, নারকেল ফাটিয়ে উদ্বোধন করলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌমিক দে। সঙ্গে বিদেশি ফুটবলার পেন ওরজি।
মা, স্ত্রী এবং একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তপনবাবুর সংসার। তাঁর স্ত্রী ইভাদেবী গৃহবধূ। ছেলে তন্ময় বেসরকারি একটি মোবাইল সংস্থায় কাজ করেন। আগে তাঁরা কালীপুরেই ফ্ল্যাটে থাকতেন। ফ্ল্যাট বিক্রি করে বাড়িটি করেছেন। বাবা-ছেলে ইস্টবেঙ্গল অন্ত প্রাণ। বিশেষত তন্ময়ের কলকাতায় মাঠে গিয়ে প্রিয় দলের ম্যাচ দেখা চাই-ই। দল অন্যত্র খেলতে গেলে সুযোগ পেলে সেখানেও যান। গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে এ দিন বাড়িতে প্রবেশপথে লাল কার্পেট পাতা হয়েছিল। অতিথিদের বসার জন্য তৈরি মণ্ডপের কাপড়ও ছিল লাল-হলুদ!
গৃহপ্রবেশের অনুষ্ঠান করলেন শৌমিক দে ও পেন ওরজি।
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের ক্লাব। দলের অন্ধ ভক্তদের নিয়ে ময়দানি ইতিহাসের পাতা ঠাসা। শুধুমাত্র লাল-হলুদ লজেন্স বিক্রি করে কেউ সমর্থকদের কাছে হয়ে উঠেছেন প্রিয় ‘লজেন্স দিদি’।
কেউ দৃষ্টিহীন হয়েও শুধুমাত্র প্রিয় দলের স্লোগান এবং বিজয়ধ্বনি শুনতে মাঠে হাজির হয়ে যান। শোনা যায়, কেউ নিজের ছেলের মৃতদেহ দাহ করেও ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিতে ছুটে এসেছেন প্রিয় দলের দেখার টানে। সেই তালিকায় নাম তুললেন তপনবাবুও। লাল-হলুদে বাড়ি রাঙিয়ে।
ওই বাড়ি দেখে ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে সৌমিকও অবাক। তিনি বলেন, ‘‘এঁদের জন্যই আমরা খেলার প্রেরণা পাই। মনে হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতেই বসে আছি।’’
এ দিনই শ্রীরামপুরে ইস্টবেঙ্গল ফ্যানস ক্লাবেরও উদ্বোধন হয়। ক্লাবের পোশাকি নাম ‘লাল হলুদ পরম্পরা’। বিকেলে মাহেশ কলোনিতে যুব কিশোর সঙ্ঘ ও শুকতারা সব পেয়েছির আসরের মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। এখানেও সৌমিক এসেছিলেন।
তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার সমীর চৌধুরী, কৃষ্ণগোপাল চৌধুরী, বর্তমান ফুটবলার কিংশুক প্রামাণিক, দলের কর্মকর্তা মানস রায়। দলের পতাকা উত্তোলনের পরে ইলিশের আদলে কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়।
খেলাধুলোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে স্বরচিত গান শোনান কৃষ্ণগোপালবাবু। উদ্যোক্তারা জানান, দল বেঁধে খেলা দেখতে যাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক কর্মসূচি নেওয়া হবে।
নিজস্ব চিত্র