আশপাশে যে বেশ কয়েক জোড়া চোখ যে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে তাদেরই উপর, বিন্দুমাত্র ঠাওর করতে পারেনি ‘নিজের পেশা’য় পোড়খাওয়া হারান গাজি বা তার সতীর্থরা। অতঃপর যা হওয়ার হলও তাই। সকলেরই ঠাঁই হল শ্রীঘরে। শনিবার রাতে কার্যত গ্রামবাসী সেজে আট জন ডাকাতকে ধরে ফেলল হুগলির চণ্ডীতলা থানার পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে মিলল আগ্নেয়াস্ত্র, তাজা বোমা, তালা কাটার যন্ত্র।
পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে ৬ জনের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে। অপর দু’জন ওই জেলারই জয়নগরের বাসিন্দা। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, দুষ্কৃতীদের দলটি ডাকাতিতে রীতিমতো হাত পাকানো। ওই দলের দু’জন সদস্য কয়েক দিন আগে চণ্ডীতলায় এসে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করে। পুলিশ খবর পায়, তারা দু’জনে সন্ধ্যায় কুমিরমোড়ায় ঘোরাঘুরি করে। এলাকার ব্যাপারে নানা রকম খোঁজ খবর নেয়। আচরণ সন্দেহজনক ঠেকায় পুলিশ গোপনে ওই দু’জনের গতিবিধির উপরে নজরদারি করতে শুরু করে।
শনিবার চণ্ডীতলা থানার ওসি তাপস সিং সূত্র মারফত জানতে পারেন, ওই রাজমিস্ত্রীরা আসলে ডাকাত দলের সদস্য। তাদের তৈরি ছক অনুযায়ী আরও ছয় দুষ্কৃতী চণ্ডীতলার কুমিরমোড়ায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হবে। সেই খবর পেয়েই পুলিশ আঁটঘাট বাধে। ওই দিন দুপুর থেকেই সাদা পোষাকের পুলিশ সেখানে ওত পাতে। পুলিশকর্মীদের কেউ লুঙ্গি-গেঞ্জি পড়ে, কেউ বা আধময়লা জামা-প্যান্ট পড়ে পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত রাত সওয়া ১২টা নাগাদ ছয় দুষ্কৃতী এসে কুমিরমো়ড়ায় একটি পেট্রোলপাম্পের কাছে জড়ো হয়। তাদের সঙ্গে রাজমিস্ত্রীর ছদ্মবেশধারী দু’জনও যোগ দেয়। তখনই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। ধৃতদের কাছে ৩টি ব্যাগ থেকে ৩টি রিভলভার, বেশ কয়েকটি তাজা বোমা, ছোরা উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, হারান গাজিই পালের গোদা। কুলতলির মধুপুরের বাসিন্দা হারানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অভিযোগ রয়েছে। রবিবার ধৃতদের শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে হারান-সহ চার জনকে ৫ দিনের পুলিশ হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। অপর চার জনকে ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে চেপে ডানকুনিতে আসে। সেখান থেকে গাড়ি ধরে কুমিরমোড়া। ডাকতদের সাঙ্গোপাঙ্গদের যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ না হয়, সে জন্য পুলিশকর্মীরা অটোরিক্সায় চেপে ঘটনাস্থলের কাছে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।’’