ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু প্রৌঢ়ের

পরিচিত এক জনের কাছ থেকে খবরটা পেয়ে চমকে উঠেছিলেন বন্ধু। প্রৌঢ়ের মোবাইলে ফোন করেছিলেন তিনি। কিন্তু বন্ধুর বদলে ফোনটা ধরেন রেল পুলিশের কর্মীরা। তাঁরাই জানালেন, নিয়ম ভেঙে লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ওই প্রৌঢ়ের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সজল ঘোষ শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০৩:০১
Share:

সজল ঘোষ

পরিচিত এক জনের কাছ থেকে খবরটা পেয়ে চমকে উঠেছিলেন বন্ধু। প্রৌঢ়ের মোবাইলে ফোন করেছিলেন তিনি। কিন্তু বন্ধুর বদলে ফোনটা ধরেন রেল পুলিশের কর্মীরা। তাঁরাই জানালেন, নিয়ম ভেঙে লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ওই প্রৌঢ়ের। তার কিছু ক্ষণ আগেই দোলে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন তিনি!

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বেলুড় স্টেশনে। রেলপুলিশ সূত্রের খবর, মৃতের নাম সজল ঘোষ (৫৬)। বালির শান্তিরাম রাস্তার বাসিন্দা ওই প্রৌঢ় বেলুড়ের হিন্ডালকো সংস্থায় কাজ করতেন। পুলিশ সূত্রের খবর, রাত ৮টা ৩৫ মিনিট নাগাদ স্টেশনের তিন নম্বর রেললাইন পেরোতে গিয়ে দুন এক্সপ্রেসের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ওই প্রৌঢ়ের শরীর। ময়না-তদন্তের পরে বুধবার পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কর্ড শাখার চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে হাওড়া যাওয়ার লোকাল ট্রেনের খবর ঘোষণা হতেই ব্যাগপত্র নিয়ে তিনি সে দিকে এগিয়ে যান। সেই সময়ে দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে আর একটি লোকাল ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। ফলে তিন নম্বর লাইনে দুন এক্সপ্রেস দ্রুত ছুটে এলেও খেয়াল করেননি সজলবাবু। তিনি দু’নম্বর লাইন পেরিয়ে তিন নম্বর লাইনে পা দিতেই দূরপাল্লার ওই ট্রেনের ধাক্কায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যান। পকেটে থাকা ভোটার কার্ড থেকে তাঁর পরিচয় জানতে পারেন পুলিশকর্মীরা।

Advertisement

সজলবাবুর পরিজনেরা জানান, মেয়ের পরীক্ষা থাকায় দোলের ছুটিতে আত্মীয়দের সঙ্গে একাই শিমুলতলা যাওয়ার জন্য রাত ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সজলবাবু। তাঁর জন্য বাকিরা অপেক্ষা করছিলেন হাওড়া স্টেশনে। বেলুড় স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে সেখানে গিয়ে বাকিদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। অন্য দিকে, হাওড়া স্টেশনে সজলবাবু না পৌঁছনোয় তাঁর বাড়িতে ফোন করেন আত্মীয়েরা। সজলবাবুর স্ত্রী তাঁদের জানান, তিনি অনেক আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন। প্রৌঢ়ের এক বন্ধু সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক পরিচিত এসে প্রথম খবরটা দেন। কিন্তু বিশ্বাস না হওয়ায় সজলের মোবাইলে ফোন করি। তখনই পুলিশ বলে, ও আর নেই। এর পরে সকলে থানায় যাই।’’

বুধবার সকালে বালির মাধব ব্যানার্জি লেনে সজলবাবুর আদি বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে স্থানীয়দের জটলা। সজলবাবুর সহকর্মী শিবেন রায় জানান, সারা বছরই দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতেন ওই প্রৌঢ়। পাশাপাশি, ছবি তোলার শখ থাকায় মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা কিনতেন। এ বারও নতুন ক্যামেরা নিয়েই বেরিয়েছিলেন শিমুলতলার উদ্দেশে। কয়েক মাস আগেই কেদার-বদ্রী ঘুরে এসেছেন। শিবেনবাবু বলেন, ‘‘বেড়াতে এতটাই ভালবাসতেন যে, অফিসের কো-অপারেটিভ থেকে ধারও নিতেন।’’ স্বামীর মৃত্যুর খবর শোনার পরে শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন স্ত্রী শ্রাবন্তীদেবী। রবিবার বাড়িতে একটি অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান থাকায় সে দিনই ফিরে আসার কথা ছিল ওই প্রৌঢ়ের। কিন্তু তা যে আর সম্ভব নয়, এ দিন সকালেও তা ঠিকমতো বুঝতে পারছিল না তাঁর দশ বছরের মেয়ে সৌম্যতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন