বাঁশবেড়িয়ায় পুলিশের দ্বারস্থ দলেরই নেতাকর্মীরা

তৃণমূল নেতার নামে নালিশ তোলাবাজির

বুধবার দেবরাজের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে দেবরাজের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে এলেন বাঁশবেড়িয়া পুরসভার কাউন্সিলর তথা শহর তৃণমূল সভাপতি অমিত ঘোষ, দলের নেতা রাজা চট্টোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাসরা। সঙ্গে ছিলেন কয়েকশো মানুষ।

Advertisement

সুশান্ত সরকার 

মগরা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০১:৫০
Share:

কোন্দল: পুলিশের কাছে দেবরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ফিরলেন তৃণমূেলরই নেতা-কর্মীরা। দেবরাজ পাল (ইনসেটে) নিজস্ব চিত্র

তিন দিন আগেই গুলি করে এলাকার এক বিজেপি নেতাকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব বিজেপি। এর মধ্যেই এ বার তোলাবাজির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হলেন দলেরই নেতাকর্মীরা!

Advertisement

তিনি—বাঁশবেড়িয়া শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি দেবরাজ পাল। বুধবার দেবরাজের বিরুদ্ধে থানায় গিয়ে দেবরাজের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে এলেন বাঁশবেড়িয়া পুরসভার কাউন্সিলর তথা শহর তৃণমূল সভাপতি অমিত ঘোষ, দলের নেতা রাজা চট্টোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাসরা। সঙ্গে ছিলেন কয়েকশো মানুষ। দেবরাজের ব্যাপারে ওসি অমিত মিত্রের কাছে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই মগরা ও বাঁশবেড়িয়ায় মন্ত্রী তপস দাশগুপ্তের ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত দেবরাজ গায়ের জোরে পুকুর বোজাচ্ছেন। বন্দুক দেখিয়ে তোলাবাজি করছে‌ন। কিন্তু দল বা পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাঁকে গ্রেফতারের দাবি ওঠে।

অবশ্য দেবরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, মগরা থানায় পুকুর বোজানো, তোলাবাজি, খুন, খুনের চেষ্টা-সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ এবং ১৩ সালে তিনটি খুনের ঘটন‌ায় তাঁর নাম জড়ায়। সেই সময়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল। জামিনে ছাড়া পান।

Advertisement

তবে দলে তাঁর প্রভাব উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। দেবব্রতবাবু বলেন, ‘‘দলের নাম করে দেবরাজ তোলাবাজি করছে। আমরা বার বার তপন দাশগুপ্ত এবং অসীমা পাত্রকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দেবরাজ তপনদার ছায়াসঙ্গী। দেবরাজ আর ওঁর দলবলের কাণ্ড-কারখানার জন্যই এখানে রত্নাদির (হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগ) হার হয়েছে। এখনও মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা তুলছে। দল কিছু না করায় পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।’’ অমিতবাবুর কথায়, ‘‘এলাকার মানুষ আমাদের কাছে দেবরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। পুলিশ কিছু না করলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।’’

হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা হবে। রবিবার রাতে গুলি চালনার ঘটনায় কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্ত করে বাকিদেরও ধরা হবে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে দেবরাজের দাবি, ‘‘আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। ওঁরাই বিজেপির সঙ্গে মিলে রত্নাদিকে হারিয়েছেন।’’

বাঁশবেড়িয়া এলাকাটি সপ্তগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। রাজ্যের মন্ত্রী এবং দলের সদ্য অপসারিত জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত এই কেন্দ্রের বিধায়ক। এখানেও রত্নাদেবী বিজেপির তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। খারাপ ফলের জন‌্য দলের একাংশ তপন-ঘনিষ্ঠ দেবরাজকেই দায়ী করছেন। ভোট-বিপর্যয়ের পরে হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে দলের দায়িত্ব পেয়েছেন মন্ত্রী তথা ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’’ তপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ওঁরা থানায় গিয়েছিলেন। তবুও বিষয়টি দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন