ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে ‘বুড়ো’কে শান্তি দিতে উদ্যোগ

‘বুড়ো’ নিঃসঙ্গ। দেখার কেউ নেই। তার উপরে অত্যাচার! ঠিক থাকতে পারলেন না উলুবেড়িয়ার মাধবপুরের বাসিন্দারা। ‘বুড়ো’কে শান্তি দিতে এককাট্টা হয়েছেন তাঁরা। খুলে ফেলেছেন ফেসবুক অ্যাকাউন্টও।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৪
Share:

চলছে বটের ঝুরি সংরক্ষণ। ছবিটি তুলেছেন সুব্রত জানা।

‘বুড়ো’ নিঃসঙ্গ। দেখার কেউ নেই। তার উপরে অত্যাচার!

Advertisement

ঠিক থাকতে পারলেন না উলুবেড়িয়ার মাধবপুরের বাসিন্দারা। ‘বুড়ো’কে শান্তি দিতে এককাট্টা হয়েছেন তাঁরা। খুলে ফেলেছেন ফেসবুক অ্যাকাউন্টও।

‘বুড়ো’কে দেখভাল করা চাট্টিখানি কথা নয়। সরকারের মুখাপেক্ষা না করে গ্রামবাসীরা কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ সেই বাঁশ ফালি করছেন, কেউ আবার ছুটিতে বাড়ি এসেই দৌড়েছেন ‘বুড়ো’র কাছে। এমনই উদ্যম দেখা যাচ্ছে ওই গ্রামের কাছে মহিষরেখায়।

Advertisement

প্রায় ২০০ বছরের ওই ‘বুড়ো’ আসলে মহিষরেখায় দামোদরের তীরে সেচ দফতরের জমিতে থাকা একটি বট। ঝুরির ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছে কাণ্ড। বিশাল গাছটিকে ঘিরে প্রায়ই চড়ুইভাতির আসর বসে। দূর থেকে আসা লোকজন গাছটির উপরে রীতিমতো অত্যাচার চালায়, এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। ডালে দোল খাওয়া তো আছেই, ঝুরি কেটে নেওয়াও বাদ যায় না। বারণ করা হলেও কেউ শোনেন না। এ সব দেখে আর চুপ থাকতে পারেননি মদন গুছাইত। তাঁরই পূর্বপুরুষ ফকিরচন্দ্র দণ্ডপাট গাছটি পুঁতেছিলেন বলে মদনবাবুর দাবি। বুড়ো বটকে বাঁচাতে তিনি প্রথমে একাই চেষ্টা করছিলেন। এগিয়ে আসেন কুলগাছিয়ার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তথা চিত্রশিল্পী তপন কর। তপনবাবু গাছটি সংরক্ষণের জন্য জনমত তৈরি করেন। সাড়া দেন গ্রামবাসীরাও। সকলে মিলে তৈরি করেন ‘মাধবপুর পরিবেশ চেতনা সমিতি’। সমিতির নামে ফেসবুকে অ্যাকাউন্টও খোলা হয়।

শুধু এই ‘বুড়ো’কেই নয়, অন্য ‘বুড়ো’দেরও বাঁচানোর জন্য তাঁরা সব রকম চেষ্টা করবেন বলে ফেসবুকে অঙ্গীকার করে ওই সমিতি। ইতিমধ্যেই তাতে প্রচুর ‘লাইক’ও পড়েছে। এ সব দেখে সাহায্যের হাত এগিয়ে দিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। সকলে মিলে এখন ওই বটের ঝুরি সংরক্ষণে দিনরাত এক করে দিচ্ছেন। প্রথমে লম্বালম্বি করে বাঁশকে চিরে ভিতরের গাঁটগুলি সাফ করা হচ্ছে। তার পরে পাইপের মতো দু’ফালি বাঁশ নিয়ে ঝুরিগুলিকে তার ভিতরে আটকে দেওয়া হচ্ছে। যে ডাল থেকে ঝুরি বেরিয়েছে, সেখান থেকে মাটি পর্যন্ত সেই বাঁশ পুঁতে দেওয়া হচ্ছে।

তপনবাবু বলেন, ‘‘চারিদিকে বেড়া দিয়ে গাছটিকে যাতে সংরক্ষণ করা হয়, সে জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতরে চিঠি দিয়েছিলাম। কেউ এগিয়ে আসেনি। তাই আমরা নিজেরাই এটি সংরক্ষণের দায়িত্ব নিই। বটের তো অনেক গুণ! ঝুরি-সমেত বাঁশটিকে এক বছর রাখতে পারলেই ঝুরি মাটিতে নেমে যাবে। আর কোনও ভয় থাকবে না।’’

মাধবপুরের বিজয় কর্মকার মুম্বইতে সোনার কাজ করেন। ছুটিতে বাড়ি ফিরেছেন। তিনিও ঝুরি সংরক্ষণে হাত লাগিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল কাজ হচ্ছে দেখে চলে এলাম।’’ সমিতির সম্পাদিকা জয়িতা কুণ্ডুর দাবি, ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খোলার পরে অনেক জায়গা থেকেই বটগাছ সংরক্ষণের অনুরোধ জানিয়ে বার্তা আসছে। প্রতিটি গাছ সংরক্ষণের চেষ্টা করা হবে।

সংরক্ষণের কাজ দেখে গিয়েছেন উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের বিডিও তমোজিৎ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘অভিনব উদ্যোগ। গাছটি সংরক্ষণ করে এখানে ইকো-পার্ক গড়ার ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’’

গ্রামবাসীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বন দফতরও। হাওড়ার সহকারী বনাধিকারিক ফাল্গুনী মল্লিক বলেন, ‘‘কেবলমাত্র সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে যে সব গাছ লাগানো হয়, তার দেখভাল করে বন দফতর। সরকারি নিয়ম যা-ই হোক না কেন, মহিষরেখায় বেসরকারি ভাবে বটগাছটির সংরক্ষণে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার প্রশংসা করতেই হবে।’’ সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাল উদ্যোগ। ওঁরা জানালে ওই কাজে আমাদের দফতরও সামিল হবে।’’

কল্পনা কুণ্ডু, প্রতিমা কুণ্ডুদের মতো গৃহবধূরা চান, নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা নষ্ট হতে বসা প্রাচীন বটগাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হোক। ‘বুড়ো’রা শান্তি পাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন