উত্তেজনা: মাঠ থেকে যা ছড়িয়ে পড়েছিল পরিবারেও। নিজস্ব চিত্র
ম্যাচের বয়স তখন ৪২ মিনিট। বক্সের বাইরে থেকে তাঁর ডান পায়ে দূরপাল্লার শটটা লাল-হলুদের জালে জড়িয়ে যেতেই উচ্ছ্বাসে ভেসে গেল চণ্ডীতলার মশাটের বাড়িটা। এই বাড়িরই ছেলে আজহারউদ্দিন মল্লিকের এটাই প্রথম ডার্বি। তাতেই কিনা বাজিমাত!
ছোট থেকেই ফুটবলে ঝোঁক আজহারের। জেলার গণ্ডী ছাড়িয়ে কলকাতা ময়দানে প্রবেশ কয়েক বছর আগে। মোহনবাগানের হয়ে এটা তৃতীয় মরসুম। আট ভাইয়ের মধ্যে আজহার ষষ্ঠ। বাবা কেবাত আলি মল্লিকের গুয়াহাটিতে গয়নার দোকান। সেখানে তাঁর চার ছেলে ব্যবসা সামলান। বাকি চার জন ফুটবল খেলেন। আজহার মোহনবাগানে। বাকি তিন জন—জা কির মল্লিক, জাহির মল্লিক আর ওয়াসিম আক্রম মল্লিক খেলেন সাইতে।
এ দিন সন্ধ্যা সাতটা বাজতে না বাজতেই মশাটের বাড়িতে টিভির সামনে বসে পড়েছিলেন আজহারের বাবা, ভাইয়েরা। মা জাহানারা বেগমও সঙ্গে ছিলেন। আজহার গোলটা করতেই আনন্দে ভেসে যান সকলে। তবে টেনশনটা তখনও যায়নি। টেনশন চেপেও রাখলেন না কেউ। কেবাত বলেই ফেললেন, ‘‘ছেলে গোল করেছে, খুব ভাল কথা। কিন্তু আগে ম্যাচটা শেষ হোক। প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে। এখন কোনও কথা বলতে পারছি না।’’ মা জাহানারা বেগমও ছেলেদের কল্যাণে ফুটবল বুঝতে শিখেছেন। তিনি বললেন, ‘‘ছেলে গোল করার পরেই কারেন্ট চলে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ কারেন্ট ছিল না। তখন টেনশন বেড়ে গিয়েছিল।’’ সাইতে আক্রম স্টপারে খেলেন। তিনি বলেন, ‘‘ভাই গোল করবে বলে একটা আশা ছিল। সেটা সত্যি হওয়ায় আমরা খুব খুশি।’’
ছোট থেকে মশাট স্পোর্টিংয়ে খেলতেন আজহার। ছেলেবেলার কোচ সমীর পালের কথায়, ‘‘ছোট থেকেই ও প্রতিভাবান। মশাট স্পোর্টিংয়ের জন্য অনেক সাফল্য এনে দিয়েছিল।’’ সমীরবাবুই আজহারকে সাইতে নিয়ে যান। সেখান থেকে আজহারকে সই করান বাগান কর্তারা। সমীরবাবু বলেন, ‘‘ওকে গোল করতে দেখে দুর্দান্ত অনুভূতি হচ্ছে। গ্রামবাংলার ফুটবল যে বেঁচে আছে, আরও একবার প্রমাণিত হল। আরও অনেক চমক ভবিষ্যতে উপহার দেবেন আজহার।’’
স্বপ্ন দেখছে মশাট।