Farmer Bill

কৃষি বিল: চাষিরা ধন্দে

কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারে নেমেছে কেন্দ্র। এ সংক্রান্ত বিল পাশ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বাঁধছে দেশের নানা প্রান্তে। এ রাজ্যের অন্যতম ‘শস্যগোলা’ হুগলির কৃষি মহল কী ভাবছে? নয়া সিদ্ধান্তে লাভ না ক্ষতি? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।কালোবাজারি এবং বেআইনি মজুত রুখতে তৈরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করছে কেন্দ্র। কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী, রফতানিকারী ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি যাতে চুক্তির ভিত্তিতে চাষ করিয়ে নিয়ে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ফসল কেনে, তাতে জোর দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

হুগলি শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৫৩
Share:

কৃষি বিলের প্রতিবাদে রবিবার চণ্ডীতলার নবাবপুর শিবতলা থেকে আলিপুর পর্যন্ত তৃণমূলের মিছিল। ছবি: দীপঙ্কর দে

একরাশ প্রশ্ন ঘুরছে হুগলির খেত-খামারে।ফসলের ন্যায্য দাম মিলবে? মজুতদারিতে নজর থাকবে সরকারের? বিপণন ব্যবস্থায় জোর আসবে?— এমন কত জিজ্ঞাসা!আসলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এখনও হুগলির গাঁ-গঞ্জের দরিদ্র কৃষকদের কাছে স্পষ্ট নয়। কেউ শুনেছেন। কিন্তু ঠিক বোঝেননি। কারও কানে এখনও সে ভাবে পৌঁছয়নি। কখনও প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা, কখনও বাড়তি ফলন, কখনও কম ফলন— নানা কারণে তাঁরা মার খান। তবু আশায় বুক বেঁধে পরের ফসল বোনেন। এ ভাবেই চলে আসছে দিনের পর দিন। ফলে, নতুন কৃষিনীতিতে তাঁরা উপকৃত হবেন কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন কেউই।

Advertisement

সিঙ্গুরের খাসেরভেড়ির চাষি মধুসূদন বাড়ুইয়ের কথাই ধরা যাক। তিনি জানান, প্রচলিত ব্যবস্থায় ফড়েরা মাঠে এসে ফস‌ল কিনে নিয়ে যান। ওঁরাই দাম ঠিক করেন। সেই জায়গায় বড় সংস্থা সরাসরি এসে বাজারের নিরিখে ভাল দাম দিয়ে ফসল কিনলে চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পারেন। একইসঙ্গে তাঁর সংশয়, ‘‘শুনছি, নয়া কৃষিনীতিতে সারের ভর্তুকি তুলে নেওয়া হবে। তা হলে তো আমাদের মতো ক্ষুদ্র চাষির সর্বনাশ!’’ তিনি বলেন, ‘‘গোটা ব্যবস্থা মহাজন বা পুঁজিপতিদের হাতে চলে যাক এবং যত খুশি মজুত করে তাঁরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করুক, এটাও চাই না।’’

পান্ডুয়ার সরাই গ্রামের সিদ্ধার্থশঙ্কর ভট্টাচার্য চার দশক ধরে ধান এবং আলু চাষ করেন। কেন্দ্রীয় কৃষিনীতি নিয়ে সিদ্ধার্থবাবুর সম্যক ধারণা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘যে নীতিই আসুক, তাতে চাষির কতটা লাভ হবে, সেটাই মোদ্দা কথা। চাষির সম্পর্কে দিনের পর দিন কতই ভাবনার কথা শুনে এলাম। কিন্তু চাষির হাল ফিরল কই? একটা সুসংহত ব্যবস্থা দরকার। যেখানে চাষি সার, বীজ থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি ন্যায্য দামে কিনবেন। ফসল বেচে লাভবান হবেন। পুঁজিপতি সংস্থার দিকে বা রাজনীতির লোকেদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না।’’

Advertisement

কালোবাজারি এবং বেআইনি মজুত রুখতে তৈরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন করছে কেন্দ্র। কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী, রফতানিকারী ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি যাতে চুক্তির ভিত্তিতে চাষ করিয়ে নিয়ে সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে ফসল কেনে, তাতে জোর দেওয়া হচ্ছে। নয়া কৃষিনীতিতে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায় ফসলের দাম নিশ্চিত করতে ও চাষিদের স্বার্থরক্ষারও ব্যবস্থা হচ্ছে বলে কেন্দ্রের দাবি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সংস্কারকে ইতিমধ্যে ‘ঐতিহাসিক’ বলে দাবি করলেও বিরোধীরা ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, এতে চাষিদের সর্বনাশ হবে।

প্রকৃতই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ‘ঐতিহাসিক’ হতে যাচ্ছে কিনা, বুঝতে পারছেন না আরামবাগের রামনগরের চাষি বিদ্যাপতি বাড়ুই। তাঁর কথায়, ‘‘বিল নিয়ে বিস্তারিত জানি না। অত্যাবশ্যক পণ্য মজুতের ক্ষেত্রে কতটা সরকারি নজরদারি থাকবে তা পরিষ্কার নয়। নজরদারি না থাকলে, দাম বাড়বে। গরিব মানুষের কেনার ক্ষমতা থাকবে না।’’ একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘চুক্তিভিত্তিক চাষে ফসল ফলিয়ে চাষি দাম পেলে ভাল।’’ নানা সংশয়ের কথা জানিয়েছেন খানাকুলের ঘোষপুরের চাষি সুদেব মুখোপাধ্যায়ও।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন