মিনির লাইন কাটা, জল না পেয়ে বিপাকে চাষিরা

মিনি ডিপ টিউবওয়েলের বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে চেক জমা দিয়েছিল পাণ্ডুয়ার হরাল দাসপুর পঞ্চায়েত। সেই চেক বাউন্স করায় পঞ্চায়েত এলাকার সবক’টি মিনি ডিপ টিউবওয়েলের সংযোগ কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। ফলে, দু’মাস ধরে জমিতে জল দিতে পারছেন না পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু চাষি। নষ্ট হচ্ছে ফসল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাণ্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০১:২৪
Share:

বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় নষ্ট হচ্ছে ফসল। — নিজস্ব চিত্র।

মিনি ডিপ টিউবওয়েলের বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে চেক জমা দিয়েছিল পাণ্ডুয়ার হরাল দাসপুর পঞ্চায়েত। সেই চেক বাউন্স করায় পঞ্চায়েত এলাকার সবক’টি মিনি ডিপ টিউবওয়েলের সংযোগ কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। ফলে, দু’মাস ধরে জমিতে জল দিতে পারছেন না পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কিছু চাষি। নষ্ট হচ্ছে ফসল। প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ।

Advertisement

পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চেক বাউন্স হওয়ার পরে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা নগদে টাকা মেটাতে বলছে। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় ওই পরিমাণ টাকা নগদে দিতে তারা অপারগ। সোমবারই বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে নগদে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পরিমাণ টাকায় যে সব জমিতে মিনি ডিপ টিউবওয়েলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবে না তা মনে করছেন পঞ্চায়েত কর্তারাই।

পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের আনোয়ার কবির বলেন, ‘‘মার্চ মাসের গোড়ায় ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার চেক দিয়েছিলাম। ব্যাঙ্কে সই না মেলায় সেটি বাউন্স করে। এখন আর বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা চেক বা ড্রাফ্‌ট নিতে চাইছিল না। নগদে টাকা দিতে বলছে। কিন্তু এত বড় অঙ্কের টাকা নগদে দেওয়ার নিয়ম নেই। তাই শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে নগদে কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

Advertisement

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বৈঁচি সাব-স্টেশনের ম্যানেজার পার্থ দত্ত এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। সংস্থার মগরার ডিভিশনাল ম্যানেজার স্বাধীন গায়েন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের তরফে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’ পাণ্ডুয়ার বিডিও নবনীপা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত প্রধানকে বলেছি, সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে। প্রশাসনিক ভাবেও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

ওই পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানকার তারাজল, বড়গ্রাম, দাংসর, বিলসড়া, শিয়ালাগড় গ্রামে ৩২টি মিনি ডিপ টিউবওয়েল আছে। তা দিয়ে প্রায় ১২০০ বিঘে জমিতে জল দেওয়া হয়। মাস কয়েক আগে পঞ্চায়েতের তরফে বিদ্যুৎ দফতরে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার চেক জমা দেওয়া হয় মিনির বকেয়া বিল বাবদ। কিন্তু ওই চেক বাউন্স করে। এর জেরেই গত ২৮ মার্চ বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার লোকজন ওই সমস্ত মিনি ডিপ-টিউবওয়েলের সংযোগ কেটে দিয়ে যান। এর ফলে অন্তত ৬০ জন চাষি জমিতে জল দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ। প্রবল গরমে জল না পেয়ে বোরো ধান, তিল গাছ নষ্ট হচ্ছে। বিপাকে পড়ে চাষিরা বিডিও দফতর, কৃষি দফতর, থানা-সহ নানা প্রশাসনিক দফতরে বিষয়টি জানান। কিন্তু দু’মাস কেটে গেলেও পরিস্থিতির হেরফের হয়নি। জলের বিকল্প ব্যবস্থাও হয়নি। শান্তিরঞ্জন ঘোষ নামে এক চাষি বলেন, ‘‘কয়েক বিঘা জমিতে তিল চাষ করেছি। মিনির লাইন কেটে দেওয়ায় গাছে জল দিতে পারছি না। ফসল নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’’ সুবলচন্দ্র রায় নামে অপর এক চাষি জানান, তাঁর কুমড়ো চাষ নষ্ট হয়েছে জল না পেয়ে। মুরারী কুমারের দাবি, তাঁর তিল এবং শশা চাষ নষ্ট হয়েছে।

তবে চাষিদের আশঙ্কা, সমস্যা সমাধানের পরে এখন জল পেলেও চাষ বাঁচবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন