জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে ধানখেত। গোঘাটে শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন মোহন দাস।
জল নামতে শুরু করার পরে অনেক স্বাভাবিক হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতা ব্লক। তবে শুক্রবার খানাকুল ২ ব্লকের অবস্থা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। শুক্রবার নতুন করে প্রাণহানি ঘটেছে এই ব্লকে। ফলে দুই জেলায় প্লাবনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল আট।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুর খানাকুল ২ ব্লকের রাজহাটি ১ পঞ্চায়েতের রাধাকৃষ্ণপুরে বাড়ির কাছেই খেলা করার সময়ে পা হড়কে প্লাবনের জলে পড়ে যায় বর্ষা খামরুই (৭) নামে এক শিশু। পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
বর্তমানে খানাকুল ২ ব্লক এবং খানাকুল ১ ব্লকের কয়েকটি পঞ্চায়েত ছাড়া আরামবাগ মহকুমার কোথাও তেমন জল জমে নেই। খানাকুল ২ বিডিও সুজিত রায় বলেন, “এখনও অনেক রাস্তায় জল জমে রয়েছে। তবে জলের উচ্চসীমা হয়তো কিছুটা নেমেছে”। প্রশাসন সূত্রে খবর, শুক্রবার ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে ৪৮ হাজার কিউসেক করেছে। জল নামার পরে শুরু হয়েছে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষা। ভাঙা এবং দুর্বল বাঁধগুলি মেরামতির কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠনের কাজও শুরু হয়েছে। জলে ডুবে যাওয়া পানীয় জলের কলগুলি সংস্কার করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর।
আরামবাগ মহকুমা ত্রাণ আধিকারিক সৌমেন দাস বলেন, “পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হচ্ছে। বর্তমানে খানাকুল ২ ব্লকে ৩টি ত্রাণ শিবির চলছে। সেখানে ৮০ জন বন্যাদুর্গত মানুষ আছেন।’’ তিনি জানান, আরামবাগ মহকুমার অন্তর্গত ব্লকগুলির মধ্যে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং ৬০ কুইন্টাল চাল ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
টানা কয়েক দিন জলে ডুবে থাকায় দুই জেলাতেই কমবেশি চাষের ক্ষতি হয়েছে। হুগলির আরামবাগ ছাড়াও বলাগড়, জাঙ্গিপাড়া এবং তারকেশ্বর এবং হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতায় সব্জি চাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। হুগলির জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক মানসরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “জেলায় সব্জি চাষে মোট ৪৯৪২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পালং শাক, মুলো, কপির মতো ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’’
হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতায় জল নামতে শুরু করার পরে প্রশাসন ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কাজ শুরু করেছে। তবে উদয়নারায়ণপুরের গড়ভবানীপুর, সোনাতলা, কানুপাট-মনশুকা-সহ চারটি পঞ্চায়েত এলাকা এখনও জলমগ্ন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, উদয়নারায়ণপুরে এখনও পর্যন্ত ১৪টি ত্রাণ শিবির চলছে। প্রায় কয়েক হাজার মানুষ সেখানে রয়েছেন। উদয়নারায়ণপুরের বিডিও দেবাশিস চৌধুরী জানান, দিন কয়েক পর থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব শুরু হবে। স্থানীয় বিধায়ক সমীর পাঁজা বলেন, ‘‘বন্যা দূর্গতদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। চিকিৎসকদের দল দূর্গত এলাকায় যাচ্ছেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিচ্ছেন।’’