আরামবাগে বন্‌ধে ভোগান্তি

রাস্তায় না ছিল অটো-টোটো, না বাস। চলেনি রিকশা। পথচারীর দেখা মিলেছে কম। আদালত খোলা থাকলেও বিচারপ্রার্থীরা আসেননি। তাই আইনজীবীরাও বেশিক্ষণ থাকেননি।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:১৮
Share:

গোলমালের আশঙ্কায় মোতায়েন পুলিশ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

খোলা ছিল হাতেগোনা দু’তিনটি ওষুধের দোকান। বাদবাকি সব দোকানপাট বন্ধ। বন্ধ বাজার।

Advertisement

রাস্তায় না ছিল অটো-টোটো, না বাস। চলেনি রিকশা। পথচারীর দেখা মিলেছে কম। আদালত খোলা থাকলেও বিচারপ্রার্থীরা আসেননি। তাই আইনজীবীরাও বেশিক্ষণ থাকেননি।

শাসকদল নয়, দলীয় কর্মী খুনের প্রতিবাদে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টা আরামবাগ বিধানসভা এলাকায় বন্‌ধের এই ছবি দেখা গেল বুধবার। বিরোধীদের ডাকা বন্‌ধে শহরের এমন চেহারা অনেকদিন দেখা যায়নি বলে অনেকেরই দাবি। যা দেখে পদ্ম-শিবির উৎসাহিত হলেও সাধারণ মানুষ কিন্তু ভোগান্তির অভিযোগ তুলেছেন। বিশেষ করে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়েছেন পরিজনেরা। অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ভাড়াগাড়িতে মহকুমা হাসপাতালে আসতে হয়েছে অনেককে।

Advertisement

স্ত্রীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়ায় আরামবাগের বাতানলের বাসিন্দা দিবাকর মালিক তাঁকে মহকুমা হাসপাতালে এনেছিলেন গাড়ি ভাড়া করে। প্রায় ১২ কিলোমিটার আসার জন্য তাঁকে গুনতে হয়েছে ৩০০ টাকা। দিবাকরবাবু বলেন, “এখানে বিরোধীরা বন‌্ধ ডাকলে তা সফল হওয়ার নজির নেই। তাই ভেবেছিলাম, বাস বা অটো-টোটো পেয়ে যাব। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরিয়ে হয়রান হলাম।”

আরামবাগ স্টেশনে নেমে তিরোল গ্রামে যাওয়ার বাস ধরার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় রেণুকা দত্তকে। শেষে তিনিও গাড়ি ভাড়া করেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন্‌ধ না করে অন্য ভাবে প্রতিবাদের রাস্তা খুঁজুক রাজনৈতিক দলগুলো। এতে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষতি হয়।’’

গত রবিবার সকালে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কালীপুর মোড়ে একটি চায়ের দোকানের সামনে বিজেপি কর্মী আমির আলি খান ওরফে লকাইকে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার পরেই তেতে ওঠে ওই ওয়ার্ড এবং আশপাশের এলাকা। ওই খুনের ঘটনার প্রতিবাদেই বুধবার ১২ ঘণ্টা আরামবাগ বিধানসভা এলাকায় বন‌্ধ ডেকেছিল বিজেপি। বন্‌ধ সফল করতে এ দিন সকালে বিক্ষিপ্ত গোলমালেরও অভিযোগ ওঠে বিজেপির বিরুদ্ধে। সকালে গৌরহাটি মোড়ে একটি বাসকে আটকানো হলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মায়াপুর মোড়ে যে দু’একটি চায়ের দোকান খুলেছিল, সেগুলি জোর করে বন্ধ করে দেওয়া এবং কালীপুরে একটি দোকান ভাঙচুরের অভিযোগও ওঠে গেরুয়া-শিবিরের বিরুদ্ধে। বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা মায়াপুরে রাস্তা অবরোধ করতে পুলিশ হটিয়ে দেয়। অশান্তির অভিযোগে পুলিশ ২০ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করে। ছ’টি মোটরবাইক আটক করা হয়। অশান্তির অভিযোগ বিজেপি মানেনি। তবে, শহরের বহু ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, অশান্তির আশঙ্কাতেই তাঁরা দোকানপাট খোলেননি।

বেলা ১১টা নাগাদ নিহতের পরিবারের লোকজনকে নিয়ে শহরে মিছিল করেন বিজেপি নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো, নেত্রী নাজিয়া এলাহি খান। জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, “যেখানেই আমাদের কর্মী-সমর্থক খুন হবেন, সেখানেই আমরা বন্‌ধ করব।” বন্‌ধ ‘সফল’ বলে দাবি করেছেন বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ। তিনি বলেন, “তৃণমূলের উপর মানুষের ক্ষোভ এবং আমাদের সঠিক পরিকল্পনা এবং দলগত প্রচেষ্টাতেই বন্‌ধ সফল হয়েছে।’’

বন্‌ধে সাড়া পড়ার পিছনে সিপিএম অবশ্য মানুষের আতঙ্কের প্রতিফলন দেখছে। সিপিএমের আরামবাগ এরিয়া (১) কমিটির সম্পাদক পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ এবং ঘৃণাই বন্‌ধ সফল করতে সাহায্য করেছে। গত এক বছরে আরামবাগ মহকুমায় বিরোধীদের ৬ জন খুন হয়েছেন। মানুষের মনে সেই সব আতঙ্কেরই প্রতিফলন ঘটেছে। বন্‌ধের বিরোধিতা করার মতো মুখ ছিল না তৃণমূলের।’’

কী বলছে তৃণমূল?

তৃণমূল প্রথম থেকেই ওই খুনে রাজনীতির যোগ নেই বলে দাবি করছে। এ দিন জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদবের দাবি, ‘‘মানুষ বন্‌ধ রুখে পথে নেমেছিলেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন