কালো ব্যাজে প্রতিবাদ, চিকিৎসা স্তব্ধ করে নয়

কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় নজিরবিহীন ভাবে থেমে গিয়েছে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ এবং বহু সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের পরিষেবা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০৬:১১
Share:

প্রতিবাদ: চন্দননগর হাসপাতালে কালো ব্যাজ পরে চিকিৎসা করছেন চিকিৎসকরা। — নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদ জানিয়েছেন সকলেই। তবে, বুকে কালো ব্যাজ পরে। চিকিৎসা পরিষেবা পুরোপুরি স্তব্ধ করে নয়।

Advertisement

কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় নজিরবিহীন ভাবে থেমে গিয়েছে রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ এবং বহু সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগের পরিষেবা। কর্মবিরতি করছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। যার জেরে ভুগতে হচ্ছে বহু রোগীকে। কিন্তু কলকাতা লাগোয়া হুগলি এবং গ্রামীণ হাওড়ার সরকারি হাসপাতালে বুধবার পরিষেবা সে ভাবে ব্যাহত হয়নি। চিকিৎসকেরা বুকে কালো ব্যাজ পরে রোগী দেখেছেন। চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে অবশ্য শুধু জরুরি বিভাগ চালু ছিল।

মঙ্গলবারও দুই জেলার হাসপাতালে কাজ হয়েছিল। তবে, বুধবার এনআরএস-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানান জেলার সরকারি চিকিৎসকেরা। এ দিন উত্তরপাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মোট ২৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের সুপার দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের সব বিভাগ অন্য দিনের মতোই চালু ছিল। বিকেল পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন রোগীর চিকিৎসা করা হয়। তাঁদের মধ্যে আবার পরিস্থিতি অনুয়ায়ী ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসকেরা প্রতিদিন যে ভাবে রোগীদের দেখেন, এ দিনও তাই হয়েছে। হাসপাতালের একটি সূত্রে জানানো হয়, বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে অন্তত ৫০ জন রোগী ভর্তি হন।

Advertisement

চুঁচুড়া সদর হাসপাতাল এবং আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও চিকিৎসকেরা তার সামনে চেয়ার-টেবিল পেতে রোগী দেখেন। আরামবাগ হাসপাতালের সুপার শিশির নস্কর বলেন, “একজন রোগীকেও ফিরতে দিইনি আমরা। চিকিৎসকেরা বহির্বিভাগে না-বসার সিদ্ধান্ত নেন। কইসঙ্গে আমরা সকালেই বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিই বহির্বিভাগের টিকিটে রোগী না-দেখলেও জরুরি বিভাগের টিকিটে রোগীদের পরিষেবা দেওয়া হবে। প্রতিদিনের মতোই রোগীরা ওষুধ-সহ যাবতীয় পরিষেবা পেয়েছেন।” ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতিদিন সেখানকার বহির্বিভাগে গড়ে প্রায় দেড় হাজার রোগী আসেন। এ দিন অবশ্য রোগীর সংখ্যা ছিল কম। প্রায় ৩০০ জনের মতো। পরিষেবায় অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় রোগীরা অনেকে আসেননি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা অবশ্য যথারীতি সকাল ৯টা থেকেই হাজির হয়ে যান।

তবে, চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগের কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। হাসপাতালের সুপার জগন্নাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু রেখেছি। চালু আছে ব্লাডব্যাঙ্কও। তবে অন্য বিভাগের কাজ চিকিৎসকদের বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেছি। আমরা রীতিমতো অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করি। রোগীর বাড়ির লোকজনকে বুঝতে হবে, চিকিৎসকদের হাতেই তাঁরা ভাল থাকবেন।’’

উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে আসা রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়েরাও চিকিৎসা পরিষেবা পেয়ে খুশি। সকাল থেকেই হাসপাতালের বহির্বিভাগে ভিড় ছিল। অন্য দিনের মতো বুধবারও চিকিৎসকেরা সকাল দশটা নাগাদ রোগী দেখা শুরু করেন। শেখ রবিয়াল নামে এক যুবক বলেন, ‘‘জ্বর হওয়ায় মাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ভেবেছিলাম হয়তো চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি পালন করবেন।

কিন্তু দেখলাম সকলে বুকে কালো ব্যাজ পরে রোগী দেখলেন।’’

হাসপাতালের সুপার সুদীপরঞ্জন কাঁড়ার জানান, সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখার ব্যাপারে কোনও সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়নি। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসককে মারধর করাটা খুবই অন্যায়। আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মানুষের কথা ভেবে আমরা চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন