দুই জেলাতে লকডাউনের একই ছবি
coronavirus

মেজাজে পুলিশ, রাস্তা সুনসান

বৃহস্পতিবার নতুন করে রাজ্যে লকডাউনে দুই জেলায় এমন দৃশ্য মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল গত মার্চের শেষে লকডাউনের শুরুর সময়টা। পুলিশ কড়া হয়েছিল। রাস্তায় বেরনোর প্রবণতা বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পরে পুলিশের সেই কড়াকড়ি আর দেখা যায়নি। এ দিন অবশ্য পুলিশ ছিল সেই পুরনো মেজাজেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

বৈদ্যবাটী-চৌমাথা মোড়ে জিটি রোডে লকডাউন অমান্য করায় দুই বাইক আরোহীকে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ।ছবি: তাপস ঘোষ

মূল সড়ক তো বটেই, বহু অলি-গলিও সুনসান!

Advertisement

হল কী! লুকিয়ে-চুরিয়ে দোকান খোলার প্রবণতাই বা কই!

বৃহস্পতিবার নতুন করে রাজ্যে লকডাউনে দুই জেলায় এমন দৃশ্য মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল গত মার্চের শেষে লকডাউনের শুরুর সময়টা। পুলিশ কড়া হয়েছিল। রাস্তায় বেরনোর প্রবণতা বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু ‘অতি সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় পরে পুলিশের সেই কড়াকড়ি আর দেখা যায়নি। এ দিন অবশ্য পুলিশ ছিল সেই পুরনো মেজাজেই।

Advertisement

তখন সকাল ১০টা হবে। পান্ডুয়ার কালনা মোড়ের জিটি রোডে মনের সুখে চরে বেড়াচ্ছিল গোটা পাঁচেক গরু। প্রায় একই সময়ে চন্দননগরের বাগবাজারে ওই রাস্তাতেই জিরিয়ে নিচ্ছিল একটি বাছুর। এই দৃশ্যই বলে দিচ্ছে, এ দিন ওই রাস্তায় যানবাহন কার্যত উধাও হয়ে গিয়েছিল।

হুগলি জেলা জুড়েই কমবেশি এই ছবি দেখা গিয়েছে।

যেখানেই পথঘাটে উটকো লোক চোখে পড়েছে, সবক শিখিয়েছে পুলিশ। কোথাও ধমকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। কোথাও ওঠবস বা লাঠিপেটার দাওয়াই। চুঁচুড়া, বৈদ্যবাটীতে অকারণে বাইরে বেরনো লোকজনকে কান ধরে ওঠবস করাতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। চুঁচুড়ায় লাঠিপেটা করা হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশের অবশ্য দাবি, গ্রেফতারি থেকে বাঁচতে কিছু
লোক নিজেরাই ওঠবস করে ক্ষমা চেয়েছেন। অনেককে গ্রেফতার বা আটক হতে হয়েছে।

লকডাউন মানাতে পুলিশের এই ভূমিকার সমর্থন করছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, বিশেষ পরিস্থিতিতে লকডাউন ঘোষণার
কথা বুধবার দিনভর মাইকে ঘোষণা করেছে পুলিশ। তা সত্বেও অকারণে রাস্তায় বেরনো অ-সচেতনতার প্রমাণ। অনেকেই অবশ্য গ্রেফতার বা আটক করার বিষয়টি সমর্থন করলেও ওঠ-েবাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার গ্রামীণ পুলিশের আওতাধীন এলাকায় মোট ৪৬ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার তথাগত বসু জানিয়েছেন।

বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়া-২ পঞ্চায়েতে এ দিন ১০০ দিন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। এ নিয়ে গ্রামে ক্ষোভ ছড়ায়। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ আলমের বক্তব্য, ওই প্রকল্পের কাজ নিয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। তাই কিছু গ্রামবাসী
কাজে চলে আসেন। তবে ঘণ্টাখানেক পরে কাজ বন্ধ করে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হরিপালের একটি স্কুলে এ দিন মাধ্যমিকের মার্কশিট বিলি হওয়ায় অভিভাবকদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া অন্য যানবাহন চলেনি। পুলিশের কাজ অবশ্য সহজ করে দিয়েছিল বৃষ্টি। সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে লোকজন নিজেদের ঘবন্দি করেই রেখেছিলেন। উলুবেড়িয়া, আমতা, উদয়নারায়ণপুর, শ্যামপুর— সব জায়গাতেই কার্যত একই ছবি।

দিনভর পুলিশ টহল দিয়েছে। সকালে বাগনানে কয়েক জন যুবককে রাস্তায় ঘুরতে দেখে পুলিশ তাড়া করে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এই ধরনের দু’-একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ছাড়া পুলিশকে বিশেষ পরিশ্রম করতে হয়নি বলে জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের আধিকারিকরাই মানছেন।তবে, বাউড়িয়া এবং চেঙ্গাইলের তিনটি জুটমিল চালু থাকা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ কাজে আসতে বাধ্য করেন। মালিেকপক্ষের অবশ্য দাবি, যাঁরা শ্রমিক-আবাসনে থাকেন, শুধু তাঁদেরই কাজে আসতে বলা হয়েছিল। বাইরে থেকে যাঁরা আসেন, তাঁদের নিষেধ করা হয়েছিল।

মহকুমাশাসক (উলুবেড়িয়া) অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কারখানার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সেই চত্বরে যাঁরা থাকেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করানো যাবে। গেট খুলে কাউকে ঢোকানো বা বের করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছিল, খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement