প্রতীকী চিত্র।
যত্রতত্র সিগারেট খাওয়া রুখতে আরও সক্রিয় হচ্ছে হাওড়া সিটি পুলিশ।
প্রকাশ্যে ধূমপান করে ধরা পড়লে দিতে হবে ২০০ টাকা জরিমানা। সেই টাকা দিতে না পারলে গ্রেফতারের নিদান তো রয়েছেই। এ বার তার সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছে সামাজিক কাজে অংশ নেওয়ার মতো ‘শাস্তি’ও। পাশাপাশি, প্রতিটি থানা মাসে প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া কত জনকে পাকড়াও করেছে, তারও নির্দিষ্ট হিসেব রাখতে হবে। সম্প্রতি এমনই পরিকল্পনা করেছেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা।
তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রকাশ্যে সিগারেট খেয়ে কেউ ধরা পড়লে প্রথমেই তাঁকে আইন মোতাবেক ২০০ টাকা জরিমানা দেওয়ার জন্য বলা হবে। তা দিতে অস্বীকার করলে গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু তাতেও আইনভঙ্গকারী আপত্তি জানালে বা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে তখন তাঁকে সামাজিক কোনও একটা কাজে অংশ নিতে বলবেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিক।
সামাজিক কাজ বলতে কী বোঝাচ্ছে পুলিশ?
পুলিশ সূত্রের খবর, কিছু ক্ষণের জন্য ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে থেকে বয়স্কদের রাস্তা পার হতে সাহায্য করা, সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ধূমপানের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা কিংবা শহর পরিষ্কার রাখার কাজে অংশ নেওয়ার মতো কিছু একটা করতে বলা হবে আইনভঙ্গকারীকে।
কমিশনারেটের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এখানে নীতি পুলিশের কোনও ব্যাপার নেই। আইনভঙ্গকারীকে তো আমরা সামাজিক কাজ করতে চাপ দিতে বা জোর করতে পারি না। তিনি যদি জরিমানা না দেন কিংবা গ্রেফতার না করতে অনুরোধ করেন, তখন তাঁকে আমরা সামাজিক কাজে অংশ নিতে পাল্টা অনুরোধ করতে পারি।’’ পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী জানান, হা়ওড়াকে তামাকবর্জিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে পুলিশের সঙ্গে কাজের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ কি শাস্তির নামে কাউকে দিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ করিয়ে নিতে পারে? এ বিষয়ে আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইনের বাইরে গিয়ে নৈতিকতা শেখানো পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তাই এটা না করাই ভাল।’’
হাওড়াকে তামাকবর্জিত জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হলেও প্রকাশ্যে ধূমপান তেমন ভাবে কমেনি বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। বছরখানেক আগেও থানার টহলদার পুলিশ কিংবা সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীদের ‘কোটপা’ (সিগারেট্স অ্যান্ড আদার টোবাকো প্রোডাক্টস অ্যাক্ট) আইনে রীতিমতো রসিদ কেটে ২০০ টাকা জরিমানা নিতে দেখা যেত। স্কুল, কলেজ, বাসস্টপ অথবা রেল স্টেশনে লাগানো সতর্কীকরণ বোর্ডে লেখা থাকত, প্রকাশ্যে কাউকে ধূমপান করতে দেখলে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট থানার কোন অফিসারকে কোন নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে হবে।
কিন্তু কোনও কিছুতেই যে ফল মেলেনি, তার প্রমাণ মেলে হাওড়া শহরের ইতিউতি ঘুরলেই। যদিও রাজ্যের মধ্যে দার্জিলিঙের পরে হাওড়াকেই দ্বিতীয় তামাকবর্জিত জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে ধূমপান রুখতে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক ও পুলিশ-সহ সকলকে নিয়ে একটি দল তৈরি হচ্ছে। ওই দলই আচমকা বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়ে হাতেনাতে পাকড়াও করে ব্যবস্থা নেবে।’’