হুগলি

বেআইনি গাড়ির দাপট রুখতে মমতার কাছে বাস মালিকেরা

আন্দোলন কম হয়নি। সরকারি নানা দফতর থেকে শুরু করে নেতা-মন্ত্রীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ—বাদ যায়নি কিছুই। কিন্তু আশ্বাসই মি‌লেছে বার বার।

Advertisement

প্রকাশ পাল

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৯
Share:

আন্দোলন কম হয়নি। সরকারি নানা দফতর থেকে শুরু করে নেতা-মন্ত্রীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ—বাদ যায়নি কিছুই। কিন্তু আশ্বাসই মি‌লেছে বার বার। কাজ কিছুই হয়‌নি। উপায় না দেখে পেশা বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলেন হুগলি জেলার বাসমালিকেরা।

Advertisement

বেআইনি গাড়ি, অটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দাবিতে বৃহস্পতিবার সকালে হুগলি জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সংগঠনের চার জনের এক প্রতিনিধি দল কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান। তাঁর হাতে লিখিত আবেদনপত্রও তুলে দেওয়া হয়। প্রতিনিধি দলের সদস্যদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সমস্যা শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অজিত খাঁ বলেন, ‘‘বেআইনি গাড়ি, অটোর দাপটে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে আমাদের। বাস চালিয়ে চালক-কন্ডাক্টর বা মালিক—কারওরই অন্নের সংস্থান হচ্ছে না বললেই চলে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছি।’’ শ্রীরামপুর মহকুমা বাস মালিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জন প্রামাণিক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। তাঁর আশ্বাসে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করি, এ বার জেলার পরিবহণ ব্যবস্থার ‘যেমন খুশি চলো’ ছবিটা বদলাবে।’’

Advertisement

বাস মালিকদের অভিযোগ, কোথাও রুট ভেঙে চ‌লা অটো বা টোটোর দৌরাত্ম্য, কোথাও নিয়ম ভেঙে ট্রেকারে যাত্রী তোলা-সহ নানা সমস্যায় বাস-পরিবহণ সঙ্কটের মুখে। যান চলাচলে প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই। পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে না পেরে একাধিক বাস রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বহু রুটে বাসের সংখ্যা কমেছে। মাস কয়েক আগে বাসমালিক সংগঠনের লাগাতার ধর্মঘটের হুমকিতে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছিল। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বেআইনি গাড়ি চলাচল বন্ধের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এর পরে কয়েক দিন বেআইনি গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু করে প্রশাসন। ধরপাকড় থেকে জরিমানা সবই হচ্ছি‌‌ল। কিন্তু দু’-একদিন পরে তাতে দাঁড়ি পড়ায় ফের পরিস্থিতি যে কে সেই।

ঘটনা হচ্ছে, গত কয়েক বছরে ৫, ৬, ৭, ১৯, ৩৪, ১২এ বাসরুট ব‌ন্ধ হয়ে গিয়েছে। ১, ২, ৩, ৪, ৪৫ সহ বহু রুটে বাসের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। অভিযোগ, জিটি রোড, অসম লিঙ্ক রোডের মতো রাজ্য সড়কেও বেআইনি ভাবে যত্রতত্র টোটো চলছে। আবার গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় পারমিট নিয়ে চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর, রিষড়া, ডান‌কুনির মতো শহরে অটো চলছে। বাস মালিকদের একাংশের অভিযোগ, শাসকদলেরই এক শ্রেণির নেতার মদতে এ সব চলছে। তাঁদের নাক গলানোর ফলেই বেআইনি গাড়ির রমরমা বেড়ে চলেছে।

বেআইনি গাড়ির রমরমায় টানা লোকসান হওয়ায় মগরা-কোলোড়া ৪৫ নম্বর রুট প্রায় পাঁচ মাস বন্ধ ছিল। তাতে বহু নিত্যযাত্রী সমস্যায় পড়েছিলেন। বলাগড়ের জাগুলিয়ার বাসিন্দা শঙ্কর মালিক রোজ সব্জি নিয়ে ওই রুটের বাসে চড়ে মগরায় যান বিক্রির জন্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্যাগপত্তর সঙ্গে থাকলে ছোট গাড়িতে ওঠা মুশকিল। বাসে সেই সমস্যা নেই। তাই বাস বন্ধ থাকলে আমাদের খুব অসুবিধা হয়।’’

৩ নম্বর রুটের বাস ধরে অঙ্কনা ঘটক নিয়মিত শ্রীরামপুরের শিরিষতলা থেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসে যান। তাঁর কথায়, ‘‘বাসভাড়া ১১ টাকা। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে বাস অনেক কমে গিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস থাকলে বাসের অপেক্ষায় না থেকে একাধিক বার অটো পাল্টে যেতে হয়। তাতে খরচ, সময় দুই-ই বেশি লাগে। আমার ধারণা, যাত্রীদের কথা ভেবে বাস চলাচল ব্যবস্থার সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ করাটা প্রশাসনের কাছে খুব কঠিন নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন