ভুল ভাঙাচ্ছেন ইমাম-মোয়াজ্জেমরা

নাবালিকা বিয়ে রোধ থেকে পালস্‌ পোলিও টিকা— দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা সরকারের নানা সামাজিক প্রকল্পে সামিল হচ্ছিলেন। গ্রামবাসীদের ভুল ধারণা ভাঙাচ্ছিলেন। এক ধাপ এগিয়ে এ বার নিজেদের উদ্যোগেই চক্ষু পরীক্ষা শিবির করে ফেললেন।

Advertisement

নুরুল আবসার 

বাগনান শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৪
Share:

উদ্যোগ: চলছে শিবির। নিজস্ব চিত্র

নাবালিকা বিয়ে রোধ থেকে পালস্‌ পোলিও টিকা— দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা সরকারের নানা সামাজিক প্রকল্পে সামিল হচ্ছিলেন। গ্রামবাসীদের ভুল ধারণা ভাঙাচ্ছিলেন। এক ধাপ এগিয়ে এ বার নিজেদের উদ্যোগেই চক্ষু পরীক্ষা শিবির করে ফেললেন।

Advertisement

ওঁরা— বাগনান-২ ব্লকের ৮০টি মসজিদের ১২৪ জন ইমাম (যিনি নমাজ পড়ান) এবং মোয়াজ্জেম (যিনি নমাজ শুরুর আগে আজান দেন)। ওই শিবিরে যাওয়ার জন্য কয়েকদিন ধরেই তাঁরা হ্যান্ডবিল ছড়িয়ে এবং মাইকে প্রচার করছিলেন। শনিবার রবিভাগ গ্রামে ওই শিবিরে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের প্রায় দু’শো মহিলা-পুরুষ চিকিৎসকদের কাছে চোখ পরীক্ষা করালেন। তবে ওষুধ বা চশমা দেওয়া হয়নি। শিবির থেকে ৩০০ গরিব মানুষকে জামাকাপড়ও দেওয়া হয়।

ইমাম-মোয়াজ্জেমদের বক্তব্য, এটা তাঁদের প্রথম উদ্যোগ। আর্থিক ক্ষমতা সীমিত হওয়ার ফলে তাঁরা এ বার ওষুধ-চশমা বিলি বা অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করতে পারেননি। ব্লকের ইমাম-মোয়াজ্জেমদের সংগঠনের সভাপতি শেখ আব্দুর রায়হান বলেন, ‘‘সরকার আমাদের ভাতা দেন। সরকারকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তাই শুধু মসজিদের মধ্যে আমরা নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখিনি। সমাজের বৃহত্তর অংশে সামিল হতে চাইছি। সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেও মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছি। কেরলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ২৫ হাজার টাকা সহায়তাও করেছি।’’

Advertisement

ভাতাপ্রাপক ওই ইমাম-মোয়াজ্জেমরা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে নানা সমাজসচেতন মূলক কাজের সঙ্গে বহুদিন ধরেই যুক্ত। আগে বিচ্ছিন্ন ভাবে করতেন। ২০১৭ সালের গোড়ায় তাঁরা সংগঠন তৈরি করেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁরা যোগাযোগ করে ব্লক প্রশাসনকে সরকারি প্রকল্পে সহায়তা করার প্রস্তাব দেন। তার পর থেকেই পালস্‌ পোলিও টিকাকরণ, স্কুলছুটদের ফেরানো, নাবালিকা বিয়ে রোধ করা, ‘নির্মল’ গ্রাম গড়া, প্রসূতিদের বাড়িতে প্রসব না-করানোর প্রচার এইসব কাজে প্রশাসনকে সহায়তা করতে থাকেন ইমাম-মোয়াজ্জেমরা।

কী ভাবে?

পালস্‌ পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচির কয়েকদিন আগে থেকে ৮০টি মসজিদেই জুম্মাবারের (শুক্রবারের) নমাজের পরে মাইক্রোফোনে ঘোষণা করা হয় কেন শিশুদের ওই টিকা দরকার। নমাজ শেষে মসজিদে আগত কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারও করেন ইমাম-মোয়াজ্জেমরা। কানাইপুর আমুরিয়া মসজিদের ইমাম আফতাবউদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের পালস‌ পোলিও টিকা খাওয়াতে চান না। আমরা তাঁদের বোঝাই।’’ গোহালবেড়িয়া মসজিদের ইমাম আমানত আলি বলেন, ‘‘অনেক প্রসূতি আমাদের কাছে দোয়া চাইতে আসেন। তাঁদের আমরা বলে দিই, শুধু দোয়াতে কাজ হবে না। প্রসব বেদনা উঠলে যেন তাঁরা যেন অবশ্যই হাসপাতালে যান। দাইয়ের খপ্পরে না-পড়েন।’’ কুলিতাপাড়া-মোড়লপাড়া মসজিদের ইমাম মইনুল ইসলাম বলেন, ‘‘অনেকে শরিয়তি আইনের দোহাই দেখিয়ে আমাদের কাছে নাবালিকার বিয়ে পড়ানোর (মুসলিম ধর্ম মতে বিয়ের কলমা পাঠ) জন্য আসেন। কিন্তু পাত্রের ২১ এবং পাত্রীর ১৮ বছরের প্রমাণ হিসেবে আধার কার্ড না-দেখে আমরা বিয়ে পড়াই না।’’

ইমাম-মোয়াজ্জেমদের এই সব উদ্যোগকে যথেষ্ট ইতিবাচক বলে বর্ণনা করেছেন বিডিও সুমন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে জনসচেতনতা তৈরিতে আমরা ওঁদের ডাকি। যেহেতু সমাজে তাঁদের একটা প্রভাব আছে, প্রচারে কাজও হয়।’’ গ্রামবাসীদেরও অনেকে জানিয়েছেন, ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্য তাঁদের অনেক ভুল ধারণা ভেঙেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন