Kalikapatadi Artist

মহিষাসুর সাজা হল না, মনমরা বিকাশ 

হাওড়ার শ্যামপুরের রতনপুরের বাসিন্দা বিকাশবাবু। বহু বছর ধরে মহালয়ার দুপুরে গ্রামে ‘মহিষাসুর বধ’ পালা হচ্ছিল।

Advertisement

নুরুল আবসার 

শ্যামপুর শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫৪
Share:

মহিষাসুর রূপে বিকাশ। ফাইল চিত্র

এ বার মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার পরেই মনটা ভার হয়ে গিয়েছিল বিকাশ জানার। ‘মহিষাসুর’ সাজা হল না। কাস্তে নিয়ে ধান কাটতে যেতে হল মাঠে।

Advertisement

হাওড়ার শ্যামপুরের রতনপুরের বাসিন্দা বিকাশবাবু। বহু বছর ধরে মহালয়ার দুপুরে গ্রামে ‘মহিষাসুর বধ’ পালা হচ্ছিল। ‘মহিষাসুর’ সাজতেন কালিকাপাতাড়ি শিল্পী বিকাশবাবু। করোনা আবহে এ বার সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ল। পালা হল না। পুজোর মরসুমে যে কোনও পালা হবে, তারও আশা নেই। বরাত মেলেনি। হতাশ বিকাশবাবু এবং তাঁর মতো অন্য শিল্পীরাও।

হাওড়া জেলার নিজস্ব লোকসংস্কৃতি কালিকাপাতাড়ি। ধরন অনেকটা পুরুলিয়ার ছৌ-নাচের মতো। ‘শুম্ভ নিশুম্ভ বধ’ ‘মহীরাবণ বধ’, ‘মহিষাসুর বধ’ প্রভৃতি পুরাণ-নির্ভর পালা মঞ্চস্থ করেন কালিকাপাতাড়ি শিল্পীরা। নাচ এবং সংলাপের মধ্যে দিয়ে পালাগুলি হয়। সঙ্গে থাকে উচ্চগ্রামের বাজনা। এক-একটি দলে অভিনেতা এবং বাদ্যযন্ত্রী মিলিয়ে প্রায় ২০ জন করে থাকেন।

Advertisement

একটা সময়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় কালিকাপাতাড়ির দল দেখা গেলেও এখন মূলত শ্যামপুরে কয়েকটি দল রয়েছে। প্রতিটি দলেরই সবচেয়ে বেশি অভিনীত পালার নাম ‘মহিষাসুর বধ’। শিল্পীরা সরকার থেকে মাসিক ভাতা পান। এ ছাড়া দলগুলি বছরে বেশ কয়েকটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এতে তাঁদের হাতে বাড়তি টাকা আসে। কিছু বেসরকারি অনুষ্ঠানে পালা করেও উপার্জন করেন তাঁরা। কিন্তু এ বছর ২৩ মার্চ লকডাউনের পর থেকে সব বন্ধ। সামান্য মাসিক ভাতা এবং চাষাবাদের উপরে নির্ভর করে কোনওমতে তাঁদের সংসার চালাতে হচ্ছে।

শিল্পীরা জানান, মহালয়ার দিন থেকেই তাঁরা সরকারি অনুষ্ঠান পেতে শুরু করেন। পুজোর মরসুমে তাঁরা তিন-চারটি করে বরাত পান। এটা চলে পরের বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত। কিন্তু এই মরসুমে এখনও পর্যন্ত তাঁরা কোনও অনুষ্ঠানের বরাত পাননি। ফলে, একরাশ শূন্যতা গ্রাস করেছে শিল্পীদের।

বিকাশবাবু বলেন, ‘‘এ বার খুব খারাপ লাগছে। প্রতি বছর মহালয়ার দিনে মহিষাসুর সাজার জন্য মুখিয়ে থাকি। এ বছর সেটা হল না।’’ বিকাশবাবু যে দলের সদস্য, সেই ‘রতনপুর কালিকাপাতাড়ি নাট্যসংস্থা’র কর্ণধার সমীরকুমার পুরকায়স্থ নিজে সাজেন দেবরাজ ইন্দ্র। হতাশ গলায় তিনি বলেন, ‘‘মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয় পালা। গ্রামের মানুষ যা প্রণামী দিতেন মাথা পেতে নিতাম। এ বছর কিছুই করতে পারলাম না। উৎসবের মরসুমে সব ওলট-পালট হয়ে গেল। কী আর করা যাবে স্বাস্থ্যবিধি তো মানতে হবে।’’

লোক সংস্কৃতির গবেষক তথা এই জেলারই বাসিন্দা তপনকুমার সেন বলেন, ‘‘শারদীয়া উৎসবকে আলাদা মাত্রা দিত পালাগুলি। কিন্তু এ বছর কোনও পালাই হচ্ছে না। এই রকম ঘটনা কোনও বছর ঘটেনি।’’

জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, করোনা সচেতনতার প্রচারে কালিকাপাতাড়ির দলকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেখানে মহিষাসুরকে দেখানো হচ্ছে ‘করোনাসুর’ হিসাবে। এ ছাড়া আর কোনও পরিকল্পনা নেই।

‘করোনাসুর’ সাজার ডাক কবে আসে, সেই আশাতেই আপাতত দিন গুনছেন বিকাশবাবুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন