তোলাবাজিতে বন্ধ কানোরিয়া, দাবি কর্তৃপক্ষের

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা সোমবারও জুটমিল খোলার আর্জি জানাতে এসেছিলেন। তাঁদের মিল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ এবং সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। শ্রমিকেরা অভিযোগ মানেননি। সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৬
Share:

স্তব্ধ: কানোরিয়া জুটমিল। — ফাইল চিত্র

ছ’মাস ধরে তালা ঝুলছে হাওড়ার ফুলেশ্বরের কানোরিয়া জুটমিলে। বিপাকে পড়েছেন সেখানকার প্রায় ৬০০ শ্রমিক। তা খোলার দাবিতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে শাসকদল সমর্থিত সেখানকার শ্রমিক সংগঠন। কিন্তু ওই সংগঠনেরই কিছু শ্রমিকের বিরুদ্ধেই তোলাবাজি এবং উৎপাদনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে জুটমিল বন্ধের দায় তাঁদের ঘাড়েই চাপিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। ওই শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করা না-হলে তাঁরা জুটমিল চালাবেন না বলেও সম্প্রতি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা সোমবারও জুটমিল খোলার আর্জি জানাতে এসেছিলেন। তাঁদের মিল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ এবং সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। শ্রমিকেরা অভিযোগ মানেননি। সঙ্কট কাটানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ মিলের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘কাজ না-করে বেতন নিয়ে কিছু শ্রমিক নানা অজুহাতে টাকা আদায় করতেন। তাঁদের তোলাবাজির জন্য চটকলের কাজ ব্যাহত হচ্ছে, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা না-হলে চটকল খোলা হবে না। বিষয়টি জেলা প্রশাসন এবং শ্রম দফতরে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

কর্তৃপক্ষের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক তথা ‘কানোরিয়া জুট সংগ্রামী শ্রমিক সংগঠন’-এর কার্যকরী সভাপতি পুলক রায়। তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা যাতে ভাল ভাবে কাজ করেন, কারখানায় সেই পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সবসময় চেষ্টা করি। চটকল কর্তৃপক্ষ ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন।’’

Advertisement

২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই জেলায় প্রথম যে বন্ধ জুটমিলটি খোলা হয় সেটি কানোরিয়া। প্রায় সাড়ে ছ’বছর মিলটি বন্ধ ছিল। নতুন সরকার যে বন্ধ কারখানা খুলতে কতটা আগ্রহী সেই বার্তাও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই বছরের ২২ অগস্ট জুটমিলটি খোলার দিন এখানে কার্যত মেলা বসে। কারণ, শ্রমিক আন্দোলনে সঙ্গে একসময়ে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই তৃণমূলে যোগ দেন। আন্দোলনে জড়িত থাকা পূর্ণেন্দু বসু শ্রমমন্ত্রী হন। তিনিই চটকলটির ফিতে কাটেন। প্রোমোটার শিবশঙ্কর পাসারি মিলটি খোলার জন্য বিনিয়োগ করেন। প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ পান।

কিন্তু চটকলটি খুললেও তা প্রথম থেকেই ভাল ভাবে চলেনি। প্রথমে দু’টি শিফ্‌টে কাজ হলেও পরে একটি শিফ্‌টে কাজ হতে থাকে। কমতে থাকে শ্রমিকের সংখ্যাও। নোটবন্দির সময়ে কয়েকদিনের জন্য কারখানা বন্ধও হয়ে যায়। তারপরে ফের খুললেও খুঁড়িয়ে চলতে থাকে। চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি মিলে তালা ঝোলান কর্তৃপক্ষ।

শ্রমিকদের অভিযোগ, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে তাঁদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়। তারপরেও তাঁরা কাজে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১১ ফেব্রুয়ারি চটকলে কাঁচামাল না-থাকার অজুহাতে তাঁদের কাজ দেওয়া হয়নি। হাজিরা-খাতাতেও সই করানো হয়নি। পরের দিনই গেটে তালা ঝোলানো হয়। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে মিল কর্তৃপক্ষের পাল্টা দাবি, যে শ্রমিকেরা কাজ না-করে বেতন তুলতেন, তাঁরাই তোলা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে বাকি শ্রমিকদের চটকলে ঢুকতে বাধা দেন। দিনের পর দিন শ্রমিকেরা কাজে না-আসায় তাঁরা নিরাপত্তার স্বার্থে বাধ্য হয়ে গেটে তালা মারেন।

এক সময়ে শ্রমিক আন্দোলনে জড়িত থাকা, বর্তমানে কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, সব পক্ষকে নিয়ে বসে দ্রুত জুটমিলটি খোলার ব্যবস্থা করা হবে। আলোচনা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন