এবার দশ বছরে পা দিল কোন্নগর বই মেলা। কিন্তু নোট বাতিলের আবহে নাজেহাল মেলার উদ্যোক্তারা।
সকাল হতেই খুচরো জোগাড়ে বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। কেন না দিনের শেষে বইয়ের দোকানদারদের হাতে খুচরো টাকা তুলে দিতে না পারলে মেলায় লেনদেন করতে পারবেন না তাঁরা। তাতে বই বিক্রি মাটি হওয়ার সম্ভাবনা। খুচরোর জোগান দিয়ে কোন্নগর বইমেলাকে তাই সচল রেখেছেন উদ্যোক্তারা।
কোন্নগর শকুনতলা কালীমন্দির লাগোয়া মাঠে এতদিন বইমেলা করে এলেও এমন গেরোয় এই প্রথম পড়লেন উদ্যোক্তারা। মেলা অন্যতম উদ্যোক্তা পুরপ্রধান বাপ্পাদিত্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা প্রতিদিন সকালে বের হচ্ছি। শহরে পরিচিত দোকানদারদের কাছ থেকে অন্তত এক লক্ষ টাকার খুচরো জোগাড় করছি। সেইসব খুচরো টাকা বইয়ের দোকানদারদের দিচ্ছি। যাতে বই কিনতে এসে খুচরো টাকার জন্য মানুষকে ফিরে যেতে না হয়।’’ মেলায় ৪০টি বইয়ের দোকানকে এ ভাবেই খুচরোর জোগান দিয়ে বইয়ের ব্যবসা সচল রাখার চেষ্টা করছেন উদ্যোক্তারা।
উত্তরপাড়া বই মেলা সবে শেষ হয়েছে। জেলায় বইমেলাগুলির মধ্যে কলেবরে অনেকটাই বড় এই মেলায় প্রায় ১০০টি স্টল হয়েছিল। নোট বাতিলের ছায়া যে মেলার স্বাভাবিক কাজকর্মে অনেকটাই বাধা হয়েছে তা জানালেন উদ্যোক্তারা। তাঁদের কথায়, মেলায় বই কেনার জন্য ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা অনেকেই সারা বছর টাকা জমায়। এ বারও তাদের উৎসাহে ভাটা ছিল না। কিন্তু নগদের জোগানের অভাবে এ বার বাড়ির বড়রা বিপদে পড়ায় টান পড়েছে ছোটদের ভাঁড়ারে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও বই কেনা হয়নি সকলের। যা প্রভাব ফেলেছে মেলার কেনাকাটায়।
মেলার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা পুরপ্রাধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘নোট কাণ্ডের ধাক্কায় এ বার মেলা অনেকটাই বেসামাল। মেলায় মাত্র চারটে বড় স্টলে পে-টিএমের ব্যবস্থা ছিল। বাকি সব স্টলে নগদের উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় ছিল না। সব মিলিয়ে মেলা ভাল কাটেনি।’’
শহরাঞ্চলের বইমেলা তবু উতরে গেলেও গ্রামীণ মেলার উদ্যোক্তারা পড়েছেন মহা ফাঁপড়ে। পাণ্ডুয়া, বলাগড়, গুপ্তিপাড়া, সিঙ্গুর-সহ বেশকিছু এলাকায় বইমেলা হয়। কিন্তু ওই মেলাগুলিতে বহু প্রকাশক, বই বিক্রেতারা যেতেই চাইছেন না। তাঁরা আশঙ্কিত, নগদের যে ভাবে হাহাকার চলছে তাতে মানুষ বই কেনায় ততটা আগ্রহী হবেন না। বলাগড় বইমেলা অন্যতম উদ্যাক্তা তপন দাস বলেন, ‘‘নগদ নেই। বইমেলার মণ্ডপের জন্য টাকা দিতে পারছি না। প্রতিবার যাঁরা মেলায় স্টল করেন, তাঁরা বলছেন স্টলের জন্য ভাড়া কম নিতে। আশঙ্কা করছেন এবার বই বিক্রি ভাল হবে না।’’
তবে অনেক মেলাই হয় ফ্রেব্রুয়ারি মাসে। ফলে হাতে কিছুটা সময় আছে। তাই পরিস্থিতি হয়তো বদলাবে এমন আশায় রয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা।