Coronavirus in West Bengal

‘খাবার চাই’, করোনা-আক্রান্তের আর্জিতেও প্রশাসন নির্বিকার

ইটাচুনা-খন্যান পঞ্চায়েতের ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর সঙ্গে ঘরবন্দি তাঁর স্বামী ও বছর চব্বিশের মেয়ে।

Advertisement

সুশান্ত সরকার

পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২০ ০৩:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

খাবার চাই। কেউ কি এনে দেবে? পাণ্ডুয়ার দুই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কাতর আর্জি কারও কানে বাজছে না। কারণ, তাঁরা করোনা-আক্রান্ত!

Advertisement

করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় নিয়ম মেনে গৃহ-নিভৃতবাসে যেতে হয়েছে ওই দুই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের। তাঁদের এক জন ইটাচুনা-খন্যান পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। অন্যজনের বাড়ি পান্ডুয়ার শিখিরা-চাপ্তা পঞ্চায়েত এলাকায়।

ইটাচুনা-খন্যান পঞ্চায়েতের ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর সঙ্গে ঘরবন্দি তাঁর স্বামী ও বছর চব্বিশের মেয়ে। ঘরে টাকা থাকলেও খাবার জুটছে না তাঁদের। বাইরে বেরনোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবু উপায় না-থাকায় এক দিন নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মুদির দোকানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ওই মহিলা। ফল ভাল হয়নি। পাড়ার লোকজনের চোখরাঙানিতে ঘরে ঢুকে পড়তে হয়েছে। অভিযোগ, পঞ্চায়েত ও ব্লক কার্যালয়ে অসহায়তার কথা জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি। কী করবেন, কোথায় যাবেন— দিশেহারা পরিবার। ওই মহিলার কথায়, ‘‘গত মঙ্গলবার সরকারি একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা করাই। তাতে আমার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। আমাকে গৃহ-নিভৃতবাসে থাকার নির্দেশ দেয় পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এলাকায় দ্রুত আমার করোনা সংক্রমণের খবর রটে যায়।’’ নিভৃতবাসে যাওয়ার পরে সমস্যায় পড়েছে ওই পরিবার।

Advertisement

ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কথায়, ‘‘এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ আমাদের বাইরে যেতে দিচ্ছে না। ঘরে টাকা আছে। কিন্তু খাবার, আনাজ, কিছুই নেই। আমি পয়সা দিয়ে খাবার কিনব। কিন্তু কেউ আমার ঘরে আসতে চাইছে না।’’ তারপর যোগ করেন: ‘‘স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও ব্লক কার্যালয়ে সব ঘটনা জানিয়েছি। কেউ সমস্যার সমাধান করছেন না।’’ তাঁর মেয়ের কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনের নির্দেশে আমরা বাইরে বেরতে পারছি না। দোকান-বাজার করতে পারছি না। ঘরে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ফুরিয়ে যাচ্ছে। কী করব, বুঝতে পারছি না।’’ করোনা-আক্রান্তের স্বামীর অভিযোগ, ‘‘পরিবারের কেউ বাইরে বেরলে লোকজন ধমকাচ্ছে। ঘরে থাকতে বলছে।’’ তাঁর কাতর আর্জি, ‘‘আমরা তো কোনও অন্যায় করিনি। ব্লক প্রশাসন আমাদের পাশে দাঁড়াক।

ইটাচুনা-খন্যান পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান তরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর করোনা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমি শুনেছি, ওদের ঘরে খাবার আছে। প্রয়োজনে আমি লোক পাঠিয়ে ওদের বাড়িতে বাজার-পৌছে দেব।’’ তাঁর আশ্বাস: ‘‘কোনও সমস্যা হবে না। তবে ওঁদের ঘরেই থাকতে হবে।’’

শিখিরা-চাপ্তা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা করোনা-আক্রান্ত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও তাঁর পরিবারের সদস্যেরাও গৃহ-নিভৃতবাসে রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ,‘‘ আমরা টাকা দিয়ে জিনিস কিনতে চাই। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেন না। এমনকি, ব্লক কার্যালয়ে জানিয়ে সুরাহা মেলেনি। পাড়ার লোকজন পাশে থাকছেন না। ঘরের সব জিনিস প্রায় শেষ হওয়ার মুখে।’’ ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর আক্ষেপ, ‘‘আমি সমাজের কাজ করি। আমাদের প্রতি কারও কোনও কর্তব্য নেই!’’

দুই করোনা-আক্রান্তের অভিযোগ, ব্লক কার্যালয়ে জানিয়েও সমাধান হয়নি। এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল হয়েছিল বিডিও (পান্ডুয়া) স্বাতী চক্রবর্তীর সঙ্গে। কিন্তু তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইলে পাঠানো হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজের-ও উত্তর আসেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন