কোর্টের মাঠে অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন শ্রীরামপুরে

শ্রীরামপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সন্তোষ ওরফে পাপ্পু সিংহের উদ্যোগে ওয়ার্ড কমিটির বার্ষিক উৎসবে এসেছিলেন দেব। পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নায়ককে দেখতে মাঠও ভরে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৫
Share:

স্টেজে তখন দেব। নিজস্ব চিত্র

ব্যবধানটা তিন দশকের। শ্রীরামপুর কোর্ট মাঠে ফিরে এল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তবে এ বারের অনুষ্ঠান অন্য সুরে বাঁধা। এক সময় ফি বছর এই মাঠে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসত। আর শনিবার সেখানেই অনুষ্ঠান করে গেলেন অভিনেতা-সাংসদ দেব।

Advertisement

শ্রীরামপুর পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সন্তোষ ওরফে পাপ্পু সিংহের উদ্যোগে ওয়ার্ড কমিটির বার্ষিক উৎসবে এসেছিলেন দেব। পৃষ্ঠপোষক ছিলেন স্থানীয় সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। নায়ককে দেখতে মাঠও ভরে গিয়েছিল। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে মন ভরছে না শহরের বাসিন্দাদের একাংশের।

শ্রীরামপুরের প্রবীণ মানুষদের স্মৃতিতে কোর্ট মাঠে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের স্মৃতি আজও অমলিন। তাঁরা জানান, শ্রীরামপুর সঙ্গীত সমাজের উদ্যোগে ওই অনুষ্ঠান আগে হত স্টেশন সংলগ্ন শ্রীরামপুর টকিজে। প্রেক্ষাগৃহ ঠাসা থাকত। অনুষ্ঠান শুনতে স্টেশনের ৩ এবং ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বহু মানুষ ভিড় জমাতেন। সেখানে মাইক লাগাতে হত। ১৯৫৭ সা‌ল নাগাদ কোর্টের মাঠে অনুষ্ঠান সরে আসে। তার পর থেকে আটের দশক পর্যন্ত নাগাড়ে অনুষ্ঠান হয়েছে।

Advertisement

শহরের প্রবীন এক বাসিন্দা ব‌লেন, ‘‘ওই সময় কে আসেননি বলুন তো!’’ বিলায়েৎ খাঁ, ভীমসেন যোশী, আলাউদ্দিন খাঁ, মালবিকা কানন, রশিদ খাঁ, রাধাকান্ত নন্দী, ওস্তাদ কেরামাতুল্লাহ, বিসমিল্লা খাঁ, পণ্ডিত রবিশঙ্কর, অজয় চক্রবর্তী— তালিকা বাড়তে থাকে। হেমা মালিনী এসেছিলেন নৃত্যশিল্পী হিসেবে। এর পরে অবশ্য আইনজীবীদের ক্রিকেট খেলা হয়েছে। মাঝে বেশ কয়েক বছর ধরেই কোর্ট মাঠে অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

কোর্ট মাঠের একই চৌহদ্দিতে আদালত ভবন এবং মহকুমাশাসকের দফতর। ওই চৌহদ্দি ডেনমার্কের উপনিবেশের সময়ের গভর্নমেন্ট কম্পাউন্ড। ডেনিস মিউজিয়ামের সহযোগিতায় ওই আমলের বিভিন্ন জীর্ণ ভবন সংস্কার কাজ চলছে। এ দিনের অনুষ্ঠানে পুনরুজ্জীবিত ‘গভর্নমেন্ট হাউজ’ও ( সেই আমলে ডেনিস এবং ইংরেজদের প্রধান প্রশাসনিক ভবন ছিল এই জায়গা। পরে মহকুমাশাসকের দফতর ছিল।) ব্যবহার করা হয়। প্রশাসন সূত্রের বক্তব্য, মাঠের দখল কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই দফতরে টানাপোড়েন ছিল। এখন মাঠের দখল প্রশাসনের হাতে এসেছে।

স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন‌ের বক্তব্য, ওই মাঠে ছোট অনুষ্ঠান করার অনুমতিও মিলত না। এ বার থেকে তা মিলবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ কাটছে না। বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য মহকুমাশাসকের দফতরে একটি চিঠি দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, দলমত নির্বিশেষে সব সংগঠনকেই যেন ওই মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

মহকুমাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেই অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘কেউ মাঠ ব্যবহারের আবেদন করলে সব দিক ভেবে অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি ঠিক হবে। এ ক্ষেত্রে শনিবার ছুটির দিন ছিল।’’

শহরের একটি সংস্থার এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘মরণোত্তর চক্ষুদানের প্রচারে এক বার মাঠ থেকে শোভাযাত্রা বেরিয়েছিল। পরের বার জমায়েত করতে দেওয়া হয়নি।’’ এক সাংস্কৃতিক কর্মী বলেন, ‘‘ওই মাঠে অনুষ্ঠানের অনুমতি মিল‌বে না, এটা যেন অলিখিত নিয়ম ছিল।’’

এ বার ছবি বদলাবে? প্রশ্ন শহরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন