চায়ের ঠেকে নারদ-নারদ

কর্মসংস্থান হল কই?

এখানে সব প্রশ্নেই তর্ক-বিতর্ক জমে। মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল? মেসি বড় না রোনাল্ডো? অমিতাভ না শাহরুখ? মমতা-মোদী তো আছেই। ভোটের দিন এগিয়ে আসছে। রাজনীতির সেই তর্কই আরও প্রবল হচ্ছে এখানে। ঠিকানা— চায়ের দোকান। আজ উলুবেড়িয়ার লতিবপুরে ৪২ নম্বর রেলসেতুর কাছে সুকুমার মান্নার চায়ের দোকান। কান পাতলেন নুরুল আবসার।উন্নয়ন তো হয়েইছে। বিশেষ করে পঞ্চায়েতের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। তবে একটা বিষয় দেখতে পাচ্ছি। নতুন ভোটারদের অনেকে মোদীর হাতে দেশ সুরক্ষিত বলে মনে করছেন।

Advertisement
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৫:৪৮
Share:

মশগুল: চায়ের কাপে তুফান তুলে আলোচনা। নিজস্ব চিত্র।

বসন্ত-সন্ধ্যায় তখন বেশ ভিড়। এক-একটি বেঞ্চে নানা বয়সী মানুষ। সুকুমারবাবু বেজায় ব্যস্ত। চায়ের বরাত আসছে ঘন ঘন।

Advertisement

নয়ন ভট্টাচার্য (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী): দলে গুরুত্ব না-পেয়ে তৃণমূলের একাংশের চাপা ক্ষোভ দেখতে পাচ্ছি। ভোটে তার প্রতিফলন ঘটতে পারে।

শ্যামল দত্ত (অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক): কিন্তু উন্নয়নমূলক কাজ তো হয়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাটের অনেক উন্নতি হয়েছে।

Advertisement

হারুচন্দ্র দে (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি গাড়ি চালক): ঠিকই। যথেষ্ট উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। এটা অস্বীকার করব কী করে?

কুন্তল অধিকারী (শিক্ষক): উন্নয়ন তো হয়েইছে। বিশেষ করে পঞ্চায়েতের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। তবে একটা বিষয় দেখতে পাচ্ছি। নতুন ভোটারদের অনেকে মোদীর হাতে দেশ সুরক্ষিত বলে মনে করছেন। বিশেষ করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পরে তাঁদের মধ্যে এই ধারণা যেন অনেকটা পোক্ত হয়েছে।

শ্যামল দত্ত: দূর, মোদী কিছুই করেননি। বিশেষ করে নোটবন্দি দেশের অর্থনীতি ভেঙে দিয়েছে। আমরা মধ্যবিত্তেরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। বিজেপিকে ভোট দিলে দেশের কোনও সমস্যার সমাধান হবে না।

কুন্তল: আমিও একমত। দেশের অর্থনীতি ভেঙেই পড়েছে বলা চলে। পুলওয়ামার জঙ্গি-হানার ঘটনা না ঘটলে যুব সমাজের মধ্যে মোদীকে নিয়ে যে ধারণা তৈরি হয়েছে তা কতটা বজায় থাকত, সন্দেহ আছে।

নয়ন ভট্টাচার্য: রাজ্যের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। মোদী সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে দেশকে সুরক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু আমার মনে হয়, কেন্দ্র ও রাজ্য দু’টি সরকারই দেশের আসল সমস্যা এড়িয়ে যাচ্ছে। সেটা কর্মসংস্থান। গত পাঁচ-ছ’বছর ধরে আমাদের রাজ্যে স্থায়ী সরকারি চাকরি হচ্ছে না বললেই চলে। উচ্চশিক্ষিত ছেলেরা পাঁচ হাজার টাকা বেতনে চুক্তির ভিত্তিতে সরকারের বিভিন্ন দফতরে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আমি নিজে ভুক্তভোগী। এতে যুবশক্তির অপচয় হচ্ছে। কেন্দ্রের কথা যত কম বলা যায় তত ভাল। বলা হয়েছিল, বছরে নাকি ২ কোটি করে বেকারের চাকরি হবে। বাস্তবে সেটা হয়নি।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শ্যামল দত্ত: ঠিকই। কর্মসংস্থান একটা বড় সমস্যা। এসএসসি পরীক্ষায় সফল প্রার্থীরা ধর্মতলায় যে ভাবে অনশন করছেন, তাতে এই সঙ্কট যেন আরও বেশি করে প্রকট। কেন্দ্র তো পুরো ভাঁওতা দিল।

হারুচন্দ্র দে: কর্মসংস্থানের সমস্যা মেটাতেই হবে।

কুন্তল অধিকারী: রাজ্যে উন্নয়ন হয়েছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অন্যদিকে, যুব সমাজের একটা অংশ আবার মনে করছেন কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দল, বিশেষ করে মোদীর হাতে দেশ সুরক্ষিত। কিন্তু কর্মসংস্থানের দিকে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। কর্মসংস্থান নানা ভাবে হতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। সব দলের সে দিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

নয়ন ভট্টাচার্য, শ্যামল দত্ত এবং হারুচন্দ্র দে (একযোগে): কর্মসংস্থানের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে যতই উন্নয়ন বা সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের কথা প্রচার করা হোক, তা শাক দিয়ে মাছ ঢাকা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন