ট্রাকের রাস্তা বন্ধ, যানজট

ফাটল দেখা দেওয়ায় ক’দিন ধরেই ঈশ্বরগুপ্ত সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৫
Share:

দিনের প্রায় ২৪ ঘণ্টাই যানজটে নাভিশ্বাস উঠছে হুগলি শিল্পাঞ্চলের।

সমান্তরাল দু’টি রাস্তা রয়েছে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার জেরে ট্রাক-ট্রেলারের মতো ভারী গাড়ি সব সময় যেতে পারছে না। ফলে, দিনের প্রায় ২৪ ঘণ্টাই যানজটে নাভিশ্বাস উঠছে হুগলি শিল্পাঞ্চলের। এই বিয়ের মরসুমে সঙ্কট আরও বেড়েছে।

Advertisement

ফাটল দেখা দেওয়ায় ক’দিন ধরেই ঈশ্বরগুপ্ত সেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। নতুন করে নির্মীয়মাণ দিল্লি রোডে শেওড়াফুলির কাছে পর পর দু’টি সেতুতেও ভারী যান চলাচল বন্ধ। পড়ে রইল জিটি রোড। চন্দননগরের যানজট ঠেকাতে কমিশনারেটের তরফে ওই রাস্তাতেও ভারী যান চলাচলের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। কলকাতাতেও একই নিয়ম। ট্রাক-ট্রেলার যাবে কোথায়?

শিল্পাঞ্চল এবং লাগোয়া এলাকাগুলিতে যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে থাকছে ট্রাক-ট্রেলার। যার জেরে রোজই তীব্র যানজট। দিনে কোনও ভাবে এগোনো গেলেও রাতে বিভিন্ন এলাকায় গাড়ির জট পাকিয়ে যাচ্ছে। এই বিয়ের মরসুমে আবার বিয়েবাড়ির বড় বড় বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অখিলেশ চতুর্বেদী অবশ্য বলেন, ‘‘পুলিশ যান নিয়ন্ত্রণ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করছে।’’ কিন্তু রোজই পথে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে জেরবার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে দিল্লি রোডে পিয়ারাপুরের আগে জামাকাপড় বোঝাই ট্রেলার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন রামকুমার শ্রীবাস্তব। আসছেন দিল্লি থেকে। যাবেন কলকাতার বড়বাজার। তিনি বলেন, ‘‘কখন যেতে পারব জানি না। আগে সোজা চলে যেতাম। এখন সেতু খারাপ। ঘুরে বালি হয়ে যেতে হবে। রবিবার শুনলাম ব্রিগেডের জন্য অনেক রাস্তা বন্ধ থাকবে। মাল খালাস করে সময়ে রাজ্য ছাড়তে পারব কিনা ভয় লাগছে। না হলে খরচ বাড়বে।’’

এমনটা অবশ্য হওয়ার কথা নয়। কারণ, জিটি রোডের বিকল্প হিসেবে দিল্লি রোড ছাড়াও দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে হুগলিতে। কিন্তু ‘টোল’ এবং ‘ওভারলোডিং’-এর জরিমানা এড়াতে অনেক ট্রাক-চালকই সে রাস্তা ধরেন না। ফলে, চাপ বাড়ে দিল্লি রোড এবং জিটি রোডে। কলকাতায় মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পর হুগলিতেও বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। তার জেরে পিয়ারাপুরের কাছে পূর্ব রেলের হাওড়া-তারকেশ্বর শাখার ওই রেলসেতু দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেতুটির হাল দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ। রেল কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেন, দ্রুত সেতুটির সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সেই কাজ কে করবে, তা নিয়ে ছ’মাস ধরেই রেল এবং রাজ্য সরকারের টানাপড়েন চলছে।

পূর্ব রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘১৯৫২ সালে তৈরি ওই সেতুটি রেললাইনের উপর রয়েছে ঠিক। কিন্তু তাতে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থাকায় রাজ্য সরকারই এতদিন সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। তাই রেল রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে সারানোর জন্য।’’ যদিও জেলা প্রশাসনের কর্তারা পাল্টা রেলের উপরেই দায় চাপিয়েছেন।

ওই সেতুতে এবং দিল্লি রোডের আর একটি সেতুতে ‘হাইট বার’ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে, সেখান দিয়ে ট্রাক যেতে পারছে না। এ ছাড়া, ট্রাকের ভিড় বাড়ছে হরিপাল হয়ে অহল্যাবাই রোডেও। বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, আরামবাগ হয়ে কলাকাতায় বালি এবং পাথর ঢোকে ওই পথে। কিন্তু সে পথেও একটি ছোট সেতুর হাল খারাপ। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকছে অসংখ্য ট্রাক।

গোটা পরিস্থিতির জন্য ক্ষুব্ধ পণ্য পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা। ট্রাক-মালিকদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ব্যবসা তলানিতে এসে ঠেকেছে। শুধু হুগলিতেই পরিবহণ ব্যবসা ৫০ হাজার মানুষের রুটিরুজির ঠিকানা। কিন্তু যানজট, রাস্তা খারাপ, সেতু খারাপ, পুলিশের অত্যাচার, সরকারি নিয়মবিধি— আর পেরে উঠছি না। এতশত বিরোধিতায় কোনও শিল্প বাঁচে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন