প্রতীকী ছবি।
শ্রমিকদের তাঁবুতে ঢুকে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণপ্রহারে মৃত্যু হল এক দুষ্কৃতীর। বুধবার ভোরে ব্যান্ডেলের বালির মোড় এলাকায় এই ঘটনায় মৃতের নাম সঞ্জয় পাসোয়ান (৩২)। তার বাড়ি হুগলিঘাট এলাকার তাঁতিপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় চুরি-ছিনতাই এবং ডাকাতির অভিযোগ ছিল। বেশ কয়েকবার তাকে হাজতবাসও করতে হয়েছে। তার সঙ্গে আসা বাকি দুই দুষ্কৃতীর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলি-চুঁচুড়া পুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় জলের পাইপ বসানোর কাজ চলছে। বালির মোড়ে কাজে নিযুক্ত মুর্শিদাবাদ থেকে আসা জনাতিরিশ শ্রমিক এলাকার পাঁচিলঘেরা একটি পার্কে তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন। বুধবার ভোর ৩টে নাগাদ সঞ্জয়-সহ তিন সশস্ত্র দুষ্কৃতী সেখানে হানা দেয়। তারা এসেছিল মোটরবাইকে। দু’জনের হাতে ছিল রিভলভার। এক জনের কাছে একটি খুর এবং কাঁচি। দুষ্কৃতীরা প্রথমে শ্রমিকদের মাথার কাছে রাখা মোবাইল হাতায়। তার পরে শ্রমিকদের বিভিন্ন ব্যাগ ঘেঁটে প্রায় ৫০ হাজার টাকা চুরি করে। এই ব্যাগ ঘাঁটাঘাঁটির সময়ে আওয়াজে এক শ্রমিক ঘুম থেকে উঠে পড়েন। এক দুষ্কৃতী তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। আর এক শ্রমিকেরও ঘুম ভেঙে যায়। তাঁর চিৎকারে অন্যেরা উঠে পড়েন।
সকলে চিৎকার শুরু করলে অবস্থা বেগতিক বুঝে দুই দুষ্কৃতী তাঁবু থেকে মোটরবাইক নিয়ে চম্পট দেয়। কিন্তু সঞ্জয় ধরা পড়ে যায়। তার হাত-পা বেঁধে শুরু হয় গণধোলাই। স্থানীয় বাসিন্দারাও চলে আসেন। ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। সংশ্লিষ্ট ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় পাল ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে পাঠায়।
এ ভাবে মোটরবাইকে দুষ্কৃতীর আনাগোনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আতঙ্কিত শ্রমিকেরাও। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ওই তাঁবুতে থাকা ভগবানগোলার বাসিন্দা তেনু শেখ বলেন, ‘‘আমরা কাজের জন্য এখানে এসেছি। এখানকার কিছুই জানি না। কে ভেবেছিল, এ ভাবে দুষ্কৃতীরা হানা দেবে? আমাদের কাছে স্থানীয় কারও ফোন নম্বরও ছিল না যে ঘটনার কথা জানাব।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কিছুদিন ধরে এই এলাকায় সন্ধের পরে মোটরবাইক আরোহী বেশ কিছু বহিরাগত যুবক ঘোরাঘুরি শুরু করেছে। সুযোগ পেলেই তারা পথচারী মহিলাদের গলার হার অথবা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে চম্পট দিচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। চন্দননগর কমিশনারেটের এক পদস্থ কর্তা জানান, সন্ধের পর থেকে এলাকায় পুলিশি টহল চলে। পাইপ বসানোর কাজে শহরে অনেক শ্রমিক এসেছেন।
সে জন্য রাতেও পুলিশি টহল চলে। পুলিশের নজর এড়াতেই ওই তাঁবুতে এ দিন ভোরে দুষ্কৃতীরা হানা দিয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।