এ ভাবেই কাটা হয়েছে এটিএম মেশিন। শুক্রবার, বেনারস রোডে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
একাধিক ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে কয়েক লক্ষ টাকা লোপাটের রহস্য এখনও ভেদ হয়নি। তার মধ্যেই আবার দু’টি এটিএম ভেঙে বহু লক্ষ টাকা লুঠ করল দুষ্কৃতীরা। ঘটনাচক্রে, দু’টিই ছিল রক্ষীবিহীন। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে লিলুয়া থানা এলাকায় স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার দু’টি এটিএমে। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা দু’টি মেশিনই গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে সমস্ত টাকা নিয়ে পালিয়েছে। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হলে তদন্তে আসেন হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ঘটনাস্থলে পৌঁছন সিটি পুলিশের গোয়েন্দারাও। পুলিশের অনুমান, যে দক্ষতায় এটিএম মেশিনগুলি কাটা হয়েছে, তাতে ব্যাঙ্ক বা এটিএমে যে বেসরকারি সংস্থা টাকা ভরার দায়িত্বে থাকে তাদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা ওড়ানো যাচ্ছে না।
এসবিআইয়ের যে দু’টি এটিএম থেকে টাকা লুঠ হয়েছে, তার একটি বেনারস রোডের উপরে কোনা হাইস্কুলের কাছে। অন্যটি প্রথমটির থেকে চার কিলোমিটার দূরে জগদীশপুরে। দু’টি এটিএমের কোনওটিতেই রক্ষী ছিলেন না। জগদীশপুরের অরক্ষিত এটিএমে ঠিক এক বছর আগে একই ভাবে গ্যাস কাটার দিয়ে মেশিন কেটে টাকা লুঠের চেষ্টা হয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এটিএমের সিসি ক্যামেরা গত কয়েক দিন ধরে বিকল। ফলে নিশ্চিন্তে সারা রাত ধরে ভল্ট কেটে টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ কোনা হাইস্কুলের কাছে ওই এটিএম কাউন্টারের জমির মালিক পিন্টু গোস্বামীর প্রথম বিষয়টি নজরে পড়ে। পিন্টুবাবু বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৯টায় এটিএমের শাটার ফেলা দেখে অবাক হয়েছিলাম। এর পরে নিজেই শাটার খুলে ভিতরের দৃশ্য দেখে ভীষণ ঘাবড়ে যাই।’’ জগদীশপুরে এসবিআইয়ের যে এটিএম কেটেছে দুষ্কৃতীরা, সেটির শাটার অবশ্য নামানো ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। ওই এলাকার এক বাসিন্দা তিমিরবরণ দাস বলেন, ‘‘সকালে দেখি শাটার খোলা। এটিএম মেশিনের নীচের অংশ পুরো কাটা।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘এর আগেও এই এটিএম ভেঙে লুঠের চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা। তার পরেও কোনও রক্ষী রাখা হয়নি।’’
অল্প দূরত্বের মধ্যে পরপর দু’টি এটিএম ভেঙে লুঠের ঘটনার পরে হাওড়া সিটি পুলিশের গোয়েন্দাদের নিয়ে তদন্তে আসেন এসিপি (উত্তর) রাহুল দে। তিনি বলেন, ‘‘এখনই কিছু বোঝা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের দিয়ে মেশিন পরীক্ষা করানো হবে।’’ তবে প্রাথমিক তদন্তের পরে কয়েকটি বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত পুলিশ। প্রথমত, একই দল এ কাজ করেছে। দ্বিতীয়ত, দু’টি এটিএমে সাধারণত নিয়মিত টাকা ভরা হয় না। কিন্তু গত কয়েক দিন টাকা ভরার পর পরই বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনা। যা থেকে অনুমান, এর পিছনে নির্দিষ্ট যোগসূত্র রয়েছে। এবং তৃতীয়ত, এটিএম সম্পর্কে রীতিমতো অভিজ্ঞ কোনও টেকনিশিয়ান ঘটনায় জড়িত না থাকলে এমন নিখুঁত কায়দায় ভল্ট কাটা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। তবে গোটা ঘটনাটি সম্পর্কে এসবিআই কর্তৃপক্ষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।