হাওড়াকে ‘নির্মল’ ঘোষণা করেও আক্ষেপ মন্ত্রীর

গরুই থাকে অনেক নয়া শৌচাগারে

সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘নদিয়া নির্মল জেলা হয়েছিল সবার আগে। কিন্তু ওই জেলায় ঘুরতে গিয়ে দেখেছি শৌচাগারে রাখা হয়েছে গরু, ছাগল। হাওড়া শহরে যে ২ লক্ষ মানুষের জন্য শৌচাগার করে দেওয়া হল লক্ষ রাখতে হবে সেগুলি ঠিক মত ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা।’’ শৌচাগার পরিষ্কার রাখার উপরও জোর দেন মন্ত্রী।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

হাওড়া শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০১:৪৮
Share:

আজব: সরকারি এই শৌচাগারে রাখা হয়েছে খড় । স্থানীয়রা অভ্যস্ত এই উপায়েই । আমতার একটি গ্রামে। ছবি: সুব্রত জানা

‘নির্মল জেলা’ ঘোষণা করা হল হাওড়াকে। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে শরৎসদনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মঞ্চে অবশ্য সতর্কবাণী শুনিয়ে রাখলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যে উঠে এল আগে নির্মল ঘোষিত চোদ্দোটি জেলার হাল। তিনি বলেন, ‘‘নির্মল জেলা ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে সরকারের করে দেওয়া শৌচাগারগুলিতে গরু, ছাগল, খড় রাখা হচ্ছে। এমন হল তো সরকারি প্রকল্পের যৌক্তিকতাই থাকে না! সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। জেলা প্রশাসনকেও নজরদারি চালাতে হবে।’’

Advertisement

সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। দিনক্ষণ বা নির্ঘণ্ট ঘোষণা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তারই মধ্যে নবান্ন থেকে আসা ২৪ ঘণ্টার নোটিসে তড়িঘড়ি নির্মল জেলা বা মুক্তশৌচ-হীন জেলা ঘোষণা করার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হাওড়া জেলা প্রশাসন। সেখানেই মন্ত্রী বলেন, ‘‘হাওড়া জেলা সচেতনার দিক থেকে অন্য জেলাগুলির থেকে অনেকটা এগিয়ে। তা সত্ত্বেও একটা কথা বলা প্রয়োজন, শৌচাগার করে দিলেই হবে না, রক্ষণাবেক্ষণও জরুরি। এ কথা বলতেই আমি সব জায়গায় ঘুরে বেড়াই।’’

পঞ্চায়েতমন্ত্রী জানান, আগে ঘোষিত কয়েকটি নির্মল জেলা ঘুরে দেখেছেন তিনি। তাঁর চোখে পড়েছে, শৌচাগারগুলি অন্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ তাঁর অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। এখনও মাঠে-ঘাটেই চলে মল-মূত্র ত্যাগ। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘নদিয়া নির্মল জেলা হয়েছিল সবার আগে। কিন্তু ওই জেলায় ঘুরতে গিয়ে দেখেছি শৌচাগারে রাখা হয়েছে গরু, ছাগল। হাওড়া শহরে যে ২ লক্ষ মানুষের জন্য শৌচাগার করে দেওয়া হল লক্ষ রাখতে হবে সেগুলি ঠিক মত ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা।’’ শৌচাগার পরিষ্কার রাখার উপরও জোর দেন মন্ত্রী।

Advertisement

হাওড়া জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী অবশ্য জানান, তাঁর জেলায় বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতেই শৌচাগার করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বছর দুই আগে করা সমীক্ষায় দেখা যায়, গোটা জেলায় প্রায় ২ লক্ষ মানুষ উন্মুক্তশৌচে অভ্যস্ত। এরপরেই ব্লকস্তরে কাজ শুরু হয়। চৈতালিদেবীর কথায়, ‘‘সরকারি আধিকারিকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে একাধিক মানুষের ব্যবহারের জন্য কমিউনিটি টয়লেট তৈরি করেছেন। পাশাপাশি পরিবার পিছু একটি করে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।’’ ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ১৪টি ব্লকের ৮০৬টি গ্রামে ২ লক্ষ ৬ হাজার ১৭৭টি শৌচাগার করে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু যে ভাবে সতর্ক করে গিয়েছেন খোদ পঞ্চায়েত মন্ত্রী, তাতে প্রশ্ন উঠছে প্রকল্পের বাস্তবতা নিয়ে। বিশেষত, রেল লাইনের পাশে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে উন্মুক্তশৌচের কুফল নিয়ে তেমন ভাবে কোনও সচেতনতা তৈরি করাই যায় না, বলছেন কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। যদিও এ দিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে বিডিও-দের প্রশংসা করেন সুব্রতবাবু। বহু এলাকায় বিডিও-রা রাত জেগে মাঠ পাহারা দেন। তাতে ফলও মিলেছে হাতেনাতে। ভোরবেলা অনেককেই ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে শৌচাগারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন