জলমগ্ন: আরামবাগের প্রফেসর পাড়া। ছবি:মোহন দাস
একটানা বৃষ্টিতে ভাসল আরামবাগ এবং হুগলির গঙ্গা তীরবর্তী শহরাঞ্চলের কিছু নিচু এলাকা। বহু জায়গাতেই নালা উপচে নোংরা জলে ডুবেছে রাস্তা। তার মধ্যেই পা ফেলতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। বর্ষার এই ভরা মরসুমে জমা জল ক’দিনে নামবে সেটাই ভাবাচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা আরামবাগ শহরের। বন্যাপ্রবণ এই মহকুমায় নদীবাঁধগুলির বহু ভাঙা এবং দুর্বল জায়গা এখনও মেরামত হয়নি। তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যেই শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টি। জলমগ্ন হয়েছে আরামবাগ শহরের ১৩টি ওয়ার্ড। দীর্ঘদিন ধরেই শহরের নিকাশি নালাগুলি বেহাল। এ জন্য পুরসভাকেই দুষছেন শহরের বাসিন্দারা। সকাল থেকেই অবশ্য পুরপ্রধান স্বপন নন্দীকে ওই সব ওয়ার্ডে কোদাল আর লোকলস্কর নিয়ে অস্থায়ী নালা তৈরি করতে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যায়।
পুরপ্রধান বলেন, “বেহাল নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা তৈরির কাজ শুরু করেছি আমরা। তিনটি দফার কাজ হয়ে গিয়েছে। শেষ দফার কাজটি কিছু বাধায় আটকে রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা চলছে। মিটে গেলেই শহরের সমস্ত জমা জল একদিকে কানা দ্বারকেশ্বর নদী এবং অন্যদিকে দ্বারকেশ্বর নদীতে ফেলা সম্ভব হবে।”
কিন্তু শেষ দফার কাজ কতদিনে শেষ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে শহরের কিছু সুপার মার্কেটেও জল ঢুকেছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে খাল-বিলগুলিতে বিভিন্ন কারখানার ছাই ফেলা হচ্ছে। পুকুরও ভরাট করা হচ্ছে বেআইনি ভাবে। ফলে, জল বের হওয়ার পথ সম্পূর্ণ বন্ধ।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল রোড উপচে পুরসভার নিজস্ব ‘পৌর সুপার মার্কেট’-এ জল ঢুকেছে। মুকুল তরফদার নামে সেখানকার এক ব্যবসায়ী বলেন, “সবাই মিলে বালতি করে জল বের করে সকাল ১১টা নাগাদ দোকান খুলতে পেরেছি। নিকাশি নালাগুলি পলিথিনে বুজে গিয়েছে।” আন্দিমহলের বাসিন্দা শঙ্কর রায় বলেন, ‘‘নোংরা জল আর জঞ্জালের স্তূপের জন্য বাড়ি থেকে বেরনোই দায়।’’
জমা জল কবে নামবে, আপাতত সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন ভুক্তভোগীরা। তাঁরা মনে করছেন, এর পরে নদীবাঁধ ভাঙলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। মহকুমা সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার প্রিয়ম পাল বলেন, “নদীবাঁধের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বড় কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে। সেগুলির বোল্ডার পিচিংয়ের অনুমোদন সদ্য মিলেছে। নভেম্বর মাস নাগাদ কাজগুলি হবে।”
আরামবাগের মতো দশা না-হলেও বৃষ্টিতে জল জমেছে পান্ডুয়ার সাতঘড়িয়া, অরবিন্দ পল্লি, সারদা পল্লি, স্টেশন রোড এবং বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তাতেও। বন্ধ হয়ে গিয়েছে সাইকেল এবং মোটরবাইক চলাচল। সারদা পল্লির বাসিন্দা মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভারী ট্রাক চলাচলের জন্য রাস্তা ভাঙছে। কিন্তু সারানো হচ্ছে না। বর্ষায় যা অবস্থা হয়েছে, চলাচল করাই দায়।’’ অরবিন্দ পল্লির বাসিন্দা সৌরীশ মণ্ডল বলেন, ‘‘রাস্তায় জমা জল নামার লক্ষণ নেই। তার উপরে রাস্তা ভাঙা। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়েই হাঁটাচলা করতে হচ্ছে।’’
পান্ডুয়া পঞ্চায়েতের প্রধান অভিজিৎ রায় জানান, জয়পুর রোড থেকে পান্ডুয়া স্টেশন পর্যন্ত রাস্তাটি গতবার হুগলি জেলা রেগুলেটেড মাকের্ট কমিটি মেরামত করেছিল। এ বছর রাস্তাটি সারানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির সম্পাদক প্রবীর বিশ্বাস এ নিয়ে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিয়েছেন।