ঝুলছে স্বামীর দেহ, অন্য ঘরে পড়ে গলা কাটা স্ত্রী

মঙ্গলবার দুপুরে হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন থানার দানেশ শেখ লেনে সরকারি আবাসনের এম-৬ ব্লকে তিনতলার ফ্ল্যাটে এ ভাবেই মিলেছে এক নিঃসন্তান দম্পতির দেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০১:০৮
Share:

আবাসন থেকে বার করে আনা হচ্ছে দেহ দু’টি। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

চারতলা সরকারি আবাসনের তিনতলায় দু’কামরার ফ্ল্যাট। সদর দরজা দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকের ঘরের ভিতরে সিলিং ফ্যান থেকে গলায় দড়ি দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে গৃহকর্তার মৃতদেহ। মৃতের ডান পায়ের পাতার উপরে রক্ত পড়ে শুকিয়ে কালো হয়ে গিয়েছে। ঘরে জ্বলছে আলো, চলছে এসি। ওই ঘর থেকে বেরিয়ে করিডর দিয়ে গেলেই আধুনিক আসবাবে সাজানো আরও একটি ঘর। সেই ঘরে এসি বন্ধ, তবে আলো জ্বলছে। বিছানায় চিৎ হয়ে পড়ে রয়েছে গৃহকর্ত্রীর গলা কাটা দেহ। বিছানার চাদর ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ঘরের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে মৃতারই একটি বড় বাঁধানো ছবি।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন থানার দানেশ শেখ লেনে সরকারি আবাসনের এম-৬ ব্লকে তিনতলার ফ্ল্যাটে এ ভাবেই মিলেছে এক নিঃসন্তান দম্পতির দেহ। যার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দম্পতির নাম বাবলু পাঠক (৪৬) এবং পাপড়ি পাঠক (৩৮)। ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, স্ত্রীকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন বাবলুবাবু। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, আপাতত একটি খুন এবং একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে তিনি বলেন, ‘‘এই মৃত্যু নিয়ে পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ জানালে নতুন ধারা যোগ করে খুনের মামলা করা হবে।’’

বাবলুবাবুর দাদা শিবু পাঠক জানিয়েছেন, এ দিন ভাইকে বারবার ফোন করে না পেয়ে তিনি ওই আবাসনে আসেন। এর পরে ফ্ল্যাটের ভেজানো দরজা খুলতেই সামনের ঘরে ভাইয়ের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনকে ডেকে আনেন। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। আসে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের আট জনের একটি দলও।

Advertisement

পুলিশ জানায়, বাবলুবাবু তেমন কোনও কাজ করতেন না। পাপড়িদেবী আগে কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন পানশালায় গান গাইতেন। তাঁর আয়েই মূলত সংসার চলত। কিন্তু গত বছর বিদ্যাসাগর সেতুতে দুর্ঘটনায় তাঁর একটি পা গুরুতর ভাবে জখম হয়। তার পর থেকে পানশালায় আর গান গাইতে যেতে পারতেন না তিনি। ফলে এক সময়ের সচ্ছল পরিবারে অভাব ক্রমশ নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। এ দিন ওই আবাসনের সামনে দাঁড়িয়ে শিবুবাবু বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে ভাই ও তার বৌয়ের বড় অসুখ ধরা পড়েছিল। তার পর থেকে ওরা ভেঙে পড়েছিল। সকালে এসে আমিই প্রথম দেখি ভাইয়ের ঝুলন্ত দেহ।’’

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, সংসারে অভাব অনটনের সঙ্গে দুরারোগ্য অসুখের খবরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বাবলুবাবু। তাই তিনিই প্রথমে স্ত্রীর গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এর পরে ছুরি দিয়ে স্ত্রীর গলা কেটে দেন। তার পরে পাশের ঘরে গিয়ে আত্মঘাতী হন বলে অনুমান। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাবলুবাবু। কারণ, স্ত্রীর গলা কাটার জন্য ছুরি-চপার থেকে শুরু করে গলায় ফাঁস দেওয়ার জন্য সবুজ নাইলনের দড়ি— সবই সম্ভবত আগে থেকে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন বাবলুবাবু। একটি ঘর থেকে আধ খাওয়া মদের বোতল ও একটি গ্লাস উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পাঠানো হয়েছে রক্তমাখা ছুরি-চপারও।

ফরেন্সিক দলের পক্ষে ওয়াসিম রাজা এ দিন বলেন, ‘‘আমরা দু’টি ঘর থেকে বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহ করেছি। সুইসাইড নোট-সহ সেগুলি পরীক্ষা করে তার পরেই বলা যাবে, ঠিক কী হয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন