ছবি: সুশান্ত সরকার।
কেউ কিনলেন স্ট্রবেরির স্বাদের বসুন্ধরা সন্দেশ, কেউ আম-রসগোল্লা!
কারও ব্যাগ ভরল রাবড়ি মেশানো পান্তুয়ায়, কারওবা বেকড্ মিহিদানায়!
ভাইফোঁটায় চমক দিতে চান বোনেরা। তাই এ বার তাঁদের ঝুলি ভরেছে ‘ফিউশন’ মিষ্টিতে। সোমবার সকাল থেকে হুগলির নামী মিষ্টির দোকানগুলিতে দেখা গেল সেই ছবিই। ‘ফিউশন’ মিষ্টি, অর্থাৎ ছানাকে মূল উপকরণ রেখে ফল, ক্যাডবেরি, স্ট্রবেরির মতো নানা জিনিসের মিশেল— বলছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথায়, খাস কলকাতার মতো মফস্সলের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানও মিষ্টির স্বাদে বদল আনছে। তাই সাবেক মিষ্টির পাশাপাশি আমদানি হয়েছে ‘ফিউশন’ মিষ্টির। চাহিদা বেড়েছে কম মিষ্টির বা ‘সুগার ফ্রি’ মিষ্টিরও।
বহু বছর আগে ওড়িশা থেকে চন্দননগরে এসেছিল সারেঙ্গি পরিবার। চন্দননগরের বিবির বেড়ে তাদের কয়েক দশকের দোকান ‘সারেঙ্গি সুইটস’। ভাইফোঁটা উপলক্ষে তারা এ বার তিন ধরনের ‘সুগার ফ্রি’ মিষ্টি বানিয়েছে। রসগোল্লা, লাড্ডু এবং সন্দেশ। এ ছাড়াও স্ট্রবেরি, আম বা আনারসের স্বাদের রসগোল্লা ঠাঁই পেয়েছে তাদের শোকেসে। দোকানের কর্ণধার দিলীপ সারেঙ্গি বলেন, ‘‘আধুনিক মিষ্টির পাশাপাশি বাচ্চাদের কথা ভেবে মিকি মাউস, ছোটা ভিমের কার্টুনের আদলে সন্দেশও তৈরি করা হয়েছে।’’
চুঁচুড়ার অনেক মেয়েই ভাই বা দাদাকে সন্দেশ সাজিয়ে দিতে পারবেন কলাপাতার সুদশ্য বাটিতে। তাঁদের জন্য এমন আয়োজন করেছে চুঁচুড়ার সন্ধ্যাশ্রী সুইটস। আবার আম, বাটারস্কচ বা কমলালেবু স্বাদের সন্দেশও বোনেদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে উঠে এসেছে। এ ছাড়াও চকোলেট সন্দেশে আখরোট দানা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যাশ্রী সুইটসের কর্ণধার অরূপ কৈরি বলেন, ‘‘মাটির ভাঁড়ে ক্রিমে চোবানো কম মিষ্টির সন্দেশ বিক্রি করছি আমরা। নাম— আবার খাব রসমালাই। রাবড়ি মেশানো পান্তুয়াও অনেকে পছন্দ করছেন।’’ নিত্যনতুন ‘আইটেম’-এর পাশাপাশি সাধারণ রসগোল্লা, সন্দেশ, পান্তুয়া, খাজা, লবঙ্গলতিকার মতো মিষ্টিও বিক্রি হয়েছে দেদার।
দুর্গাপুজোর পর থেকেই ৯১ রকমের মিষ্টির তালিকা করে হাতে-হাতে লিফলেট বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিল রিষড়ার ফেলু মোদক। ভাবনা-চিন্তা করে পছন্দসই মিষ্টিতে দাগ দিয়ে অর্ডার দিয়েছেন ক্রেতারা। ক্যুরিয়ারেও মিষ্টি পাঠানো হয়েছে দেশের নানা জায়গায়। দোকানের কর্ণধার অমিতাভ দে জানান, এ বার বেকড্ রসগোল্লা, বেকড্ মিহিদানা বা বেকড্ সন্দেশের চাহিদা রয়েছে। কাজুবাদাম দেওয়া গজা, আম্রলতিকা (লবঙ্গলতিকার ভিতরে আমের পুর এবং আমসত্ত্ব কুচি) বা বসুন্ধরা সন্দেশ (বাইরে নতুন গুড় আর ভিতরে স্ট্রবেরি স্বাদ) তৈরি করা হয়েছে।
এ ছাড়াও বোনেদের পছন্দের তালিকায় রয়েছ ‘নোনতা স্বাদের মিষ্টি’ও। জায়ফল, জয়িত্রি, ছোট এলাচ, দারচিনি মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে সন্দেশ। কাজুবরফির উপরে তবক না দিয়ে চকোলেট, পেস্তাবাদাম বা ক্ষিরের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ডায়াবেটিক রোগীদের কথা ভেবে সাত-আট রকমের ‘সুগার ফ্রি’ মিষ্টিও বানিয়েছে তারা। অমিতাভবাবু বলেন, ‘‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মিষ্টিতেও বদল এসেছে। বোনেদের খুশি করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি আমরা।’’ চুঁচুড়ার বাবা পঞ্চানন, গৌতম সুইটস, চন্দননগরের সূর্য মোদক বা মৃত্যুঞ্জয় সুইটস-সহ নানা দোকানেও বিক্রি হচ্ছে ‘ফিউশন’ মিষ্টি।
জেলার শহুরে এলাকার পাশাপাশি পান্ডুয়ার লক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারেও খোঁজ মিলল চকোলেট সন্দেশের। দোকান মালিক বিশ্বজিৎ পাল জানালেন, ভাঁইফোঁটার কথা মাথায় রেখে এ বারেই প্রথম এই ধরনের মিষ্টি বানিয়েছেন তাঁরা। সাড়াও মিলছে।
আর তাই, ‘‘আসছে বছর আরও হবে’’, বলছেন জেলার মিষ্টি ব্যবসায়ীরা।