জেলা জুড়ে খাস জমি পড়ে খণ্ড খণ্ড

জমি জট হাওড়ায়, অনিশ্চিত ‘নিজশ্রী’

নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য সরকারি খরচে আবাসন তৈরি করে কম খরচে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিল আবাসন দফতর। হাওড়া জেলায় তা মাঠে মারা যেতে বসেছে শুধুমাত্র জমির অভাবে।

Advertisement

নুরুল আবসার

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪১
Share:

নবান্ন। —ফাইল চিত্র।

জমিজটে আটকে যাচ্ছে নিজশ্রী প্রকল্প।

Advertisement

নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য সরকারি খরচে আবাসন তৈরি করে কম খরচে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছিল আবাসন দফতর। হাওড়া জেলায় তা মাঠে মারা যেতে বসেছে শুধুমাত্র জমির অভাবে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এই প্রকল্পে একটি আবাসনের জন্য ন্যূনতম দশ কাঠা জমির প্রয়োজন। সেখানে পাঁচতলা ভবন তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু হাওড়া জেলায় এক লপ্তে দশ কাঠা জমি জোগাড় করা সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

মাস ছয়েক আগে ‘নিজশ্রী’ নামে প্রকল্পটি চা‌লু করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আবাসনে দু’ধরনের ফ্ল্যাট হওয়ার কথা— এক কামরা এবং দু’কামরার। দাম পড়ার কথা কমবেশি ১৯০০ টাকা বর্গফুট করে। অসংগঠিত শ্রমিক, চুক্তিভিত্তিক মাসিক ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার করেন এমন সরকারি ও বেসরকারি কর্মী এবং প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের জন্যই প্রকল্পটি বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। প্রকল্পটি হওয়ার কথা পঞ্চায়েত এলাকায়।

প্রকল্পটি চালু হওয়ার পরেই জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ১৪টি ব্লককে জমি জোগাড় করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে বলা হয় সরকারি খাস জমির দিকে। কিন্তু সমস্যায় পড়েন ব্লক প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ল্যান্ড ব্যাঙ্কে জমি চান। দেখা যায় এক লপ্তে ১০ কাঠা জমি কার্যত কোথাও নেই।

প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, কিছু ব্লকে সেচ দফতরের অধীনে সরকারি জমি রয়েছে। কিন্তু তা চর হিসাবে চিহ্নিত। তাই আইনত সেখানে আবাসন প্রকল্প গড়া যায় না। আবার পূর্ত (সড়ক) দফতরের অধীনেও কিছু জমি রয়েছে। কিন্তু সেই জমিও পূর্ত দফতরেরই ব্যবহার্য বলে ওই দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কয়েকটি ব্লকে আবার অন্য অভিজ্ঞতা হয়েছে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের। একটি ব্লকের আধিকারিকরা জানান, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে তাঁদের প্রায় চার একর খাস জমির কাগজপত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই জায়গায় গিয়ে দেখা যায়, ‘নিজ ভূমি নিজ গৃহ’ প্রকল্পে তা আগেই পাট্টা দেওয়া হয়েছে ভূমিহীনদের। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে তাঁদের বাড়িও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

ব্লক আধিকারিকেরা জানান, জমি ব্যবহার হয়ে গেলেও ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর রেকর্ড পরিবর্তন করেনি। সরকারি রেকর্ডে তা খাস হিসাবেই রয়ে গিয়েছে। কয়েকটি ব্লক থেকে আবার জমি কেনার জন্যও জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়। কিন্তু হাওড়া জেলায় জমির দাম অনেক বেশি। দশ কাঠা জমি কিনতে যে পরিমাণ টাকা লাগবে তা আবাসন দফতর দিতে রাজি নয়— এমনই জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদের অনেকে।

হাওড়া জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ জানান, এই জেলায় এমনিতেই খাস জমির পরিমাণ কম। তার উপরে নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্পে প্রায় সব খাস জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হয়েছে। যে জমি পড়ে আছে তা খণ্ড খণ্ড। তাতে আবাসন প্রকল্প হওয়া সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসনের ওই কর্তাদের বক্তব্য, প্রকল্পটি চালু হলেও তা হাওড়া জেলায় তা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে।

জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা অবশ্য বলেছেন, ‘‘বাগনান ১ ও ২ ব্লক এবং ডোমজুড়ে কিছুটা জমি পাওয়া গিয়েছে। বাকি ব্লকগুলিতেও তন্ন তন্ন করে জমি খোঁজা হচ্ছে।’’ জেলায় প্রকল্প নিয়ে অসুবিধা হবে না বলেও তাঁর দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন