আঁতুড়ঘর: ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিকাশি নালার অবস্থা। নিজস্ব চিত্র
স্মৃতি এখনও টাটকা। গত বছর মশাবাহিত অসুখ কম ভোগায়নি এই শহরকে। ডেঙ্গির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে কম হ্যাপা পোহাতে হয়নি এ শহরকে। সেই পরিস্থিতি যাতে ফিরে না আসে, সে জন্য জানুয়ারি মাস থেকেই রাজ্যের সমস্ত পুরসভাকে অভিযানে নামতে বলেছে নবান্ন। ইতিমধ্যেই সাড়ে তিনমাস পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মশা মারা থেকে সাফাই অভিযান— কোনও কাজেই বৈদ্যবাটি পুর-কর্তৃপক্ষ এখনও পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেনি। পুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশ কিছু জায়গায় সাফাই এবং সুষ্ঠু নিকাশির প্রশ্নে পুর কর্তৃপক্ষ ডাহা ফেল।
অভিযোগ যে অমূলক নয়, পুরএলাকা ঘুরলেই তা টের পাওয়া যাবে। নার্সারি রোড, রাজারবাগান, মালিরবাগান, চক গোয়ালাপাড়া, চক বাগদিপাড়া, কাজিপাড়া, মাঠপাড়া, পম্পানগর, বাগের বাগান প্রভৃতি জায়গায় নিকাশির সমস্যা রয়েছে বলে জানালেন সেখানকার বাসিন্দারা। কোথাও রাস্তার ধারে ঝোপজঙ্গল হয়ে রয়েছে। কোথাও বা নিকাশির জল, খাটালের গোবর পুকুরে পড়ছে। অথচ পুকুর সংস্কারের বালাই নেই। নার্সারি রোডের এক গৃহবধূ বলেন, ‘‘দু’মাস পরেই বর্ষা। মশার উপদ্রব শুরু হল বলে। মশা দমনে পুরসভার তরফে কোনও উদ্যোগই এখনও চোখে পড়েনি।’’ বাগের বাগান এলাকার এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘আমাদের এলাকায় সাফাইয়ের সমস্যা রয়েছে। নর্দমার বেহাল অবস্থা। মশার বিরুদ্ধে লড়তে গেলে এখনও অনেকটা কাজ করতে হবে।’’
পুর-কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছেন, ডেঙ্গি-ম্যালিরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযানের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সেইমতো কাজও শুরু হয়েছে। উপ-পুরপ্রধান ব্রহ্মদাস বিশ্বাস বলেন, ‘‘মশার লার্ভা মারার জন্য তেল ছড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। কারও বাড়িতে যাতে জল না জমে থাকে, জ্বর হলে কেউ যেন হেলাফেলা না করেন এই সব নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছেন। উপ-পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘মশার উপদ্রব ঠেকাতে পুরসভা যা যা করা দরকার সবই করছে। তবে কোনও এলাকায় ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের আরও বেশি করে দায়িত্ব নিতে হবে। তা হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’
বাসিন্দারা অবশ্য বলছেন, কেবল দু’চার দিন মশা মারলেই হবে না। সমস্যা পুরোপুরি নির্মূল করতে নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। বিশেষত যে সব এলাকা নীচু সেই সব এলাকায় এ বিষয়ে আরও জোর দিতে হবে। শহরের মাটিপাড়ার বাসিন্দা গৌর পাল বলেন, ‘‘বর্ষার শুরু থেকেই মশার উপদ্রব হয়। বৃষ্টি হলে পথঘাটে জল দাঁড়িয়ে যায়। তাতে মশার উপদ্রব আরও বাড়ে। তাই সার্বিক পরিকল্পনা না নিয়ে শুধু মশার পিছনে ছুটলে পরিস্থিতির বিশেষ হেরফের হবে বলে মনে হয় না।’’