উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয়েছে গত শুক্রবার। বিভিন্ন কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি চলছে। গত শিক্ষাবর্ষে হাওড়ায় মাত্র ৫টি কলেজে পুরোপুরি অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি হয়েছিল। এ বার সব কটি ডিগ্রি কলেজেই অনলাইনে ভর্তি শুরু হচ্ছে, আজ সোমবার থেকে। হুগলির অধিকাংশ কলেজেও অনলাইনে ভর্তি নেওয়া হবে।
কলেজে সরাসরি গিয়ে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে আগে দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠত। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে রাজ্য সরকার অনলাইনে ছাত্র ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গত বছর পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এ বার দুই জেলায় অবশ্য প্রায় সব কলেজেই অনলাইনে ভর্তি নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
হাওড়ায় প্রথম অনলাইনে ছাত্র ভর্তি শুরু হয় আন্দুল প্রভু জগদ্বন্ধু কলেজ। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সাল থেকে পুরো ভর্তি পদ্ধতি অনলাইনে চালু হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সারদা মণ্ডল বলেন, ‘‘২০১০ সাল পর্যন্ত ভর্তি নিয়ে ছোটখাটো গোলমাল লেগে থাকত। অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরে কোনও সমস্যা হয়নি। আবেদনপত্রের স্ক্রুটিনি বাদ দিয়ে ভর্তি সংক্রান্ত সব কাজ অনলাইনেই হবে।’’
আন্দুলের কলেজটি ছাড়াও নরসিংহ দত্ত কলেজ, বেলুড় লালবাবা কলেজ, হাওড়া গার্লস কলেজ এবং শিবপুর দীনবন্ধু কলেজে অনলাইনের মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি নেওয়া হয়েছিল। কানাইলাল কলেজে লাইন দিয়ে এবং অনলাইন— দুই পদ্ধতিই চালু ছিল। লালবাবা কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তৃণাশ্রী ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘অনলাইনে ভর্তির ফলে ছাত্রছাত্রীদের পরিশ্রম কমে গিয়েছে। তবে টাইপ করার যাতে ভুল না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’’ কলেজের ওয়েবসাইটে আজ, সোমবার থেকেই ভর্তির আবেদনপত্র মিলবে। আজ থেকে আবেদনপত্র পাওয়া যাবে শিবপুর কানাইলাল কলেজ, শ্যামপুর সিদ্ধেশ্বরী মহাবিদ্যালয়, জগৎবল্লভপুর শোভারানি মেমোরিয়াল কলেজ, নরসিংহ দত্ত কলেজ-সহ বেশ কয়েকটি কলেজে। বাগনান কলেজের ওয়েবসাইটে আবেদনপত্র মিলবে ৪ জুন থেকে। উলুবেড়িয়া কলেজে ২ তারিখ থেকে আবেদনপত্র মিলবে।
তবে, ডোমজুড়ের ডোমজুড় আজাদ হিন্দ ফৌজ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে শুরু ভর্তির আবেদনপত্র অনলাইনে মিলবে। ভর্তি সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ৩ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত কলেজের ওয়েবসাইটে ভর্তির আবেদনপত্র পাওয়া যাবে। তবে তা জমা দিতে হবে কলেজে এসে। আবেদনপত্র কেনা ও ভর্তির টাকা নেওয়া হবে কলেজ সংলগ্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। পলাশবাবু বলেন, ‘‘পরিকাঠামোগত সমস্যার জন্য আবেদনপত্র কলেজে এসে জমা দিতে হবে। পরের বছর পুরো পদ্ধতিটাই অনলাইনে হবে।’’
জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকটি কলেজের বাইরের চত্বরে তাদের কর্মীরা ল্যাপটপ নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করবেন। তবে এসএফআই, ছাত্র পরিষদ, এবিভিপি-র মতো বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির আশঙ্কা, ভর্তি প্রক্রিয়া টিএমসিপি নেতারাই নিয়ন্ত্রণ করবেন।
হুগলিতে কলেজের সংখ্যা ৩২টি। শ্রীরামপুর মহকুমার কলেজগুলি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। আর চন্দননগর, চুঁচুড়া এবং আরামবাগ মহকুমার কলেজগুলি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। বছর কয়েক ধরেই শ্রীরামপুর কলেজে অনলাইন পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হয়। এ বারেও একই পদ্ধতিতে ভর্তি নেওয়া হবে। মশাট বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সমীরকুমার সিংহ বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ মেনে অনলাইনে ফর্ম দেওয়া এবং জমা নেওয়া হবে। টাকা জমা দিতে হবে ব্যাঙ্কে।’’ উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজেও অনলাইনে ভর্তি নেওয়া হবে। চন্দননগর গভর্নমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ বিজয়কৃষ্ণ রায় জানান, কয়েক বছর ধরেই ওই কলেজে অনলাইন পদ্ধতি চালু হয়েছিল। এ বারেও ওই ভাবেই ভর্তি নেওয়া হবে। তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অমলকান্ত হাটি বলেন, ‘‘অনলাইন প্রক্রিয়ায় ভর্তি নেওয়া হবে। আজ, (সোমবার) ওয়েবসাইটে সব জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ আরামবাগ নেতাজি মহাবিদ্যালয়ে পুরোপুরি অনলাইনেই ভর্তি নেওয়া হবে বলে অধ্যক্ষ অসীম দে জানান। আরামবাগ মহকুমার অন্যান্য কলেজেও অনলাইনেই ভর্তি নেওয়া হবে।
জেলা টিএমসিপি-র সহ সভাপতি কৌশিক শীল বলেন, ‘‘অনলাইন প্রক্রিয়া স্বাগত। ভর্তি প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংসদগুলি সহায়তা করবে।’’ এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক পার্থ দাস বলেন, ‘‘ভর্তি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে আগেই আমরা অনলাইনের দাবি জানিয়েছিলাম। দুর্নীতিমুক্ত ভর্তি প্রক্রিয়া এবং দুষ্কৃতীমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আশা করব, অনলাইনে নির্বিঘ্নে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হবে।’’