মধ্যরাতে কাচ ভেদ করে গুলি, তাণ্ডব

শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ এমনই ঘটেছে হাওড়ার শিবপুরের ট্রাম ডিপো এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন কাউস ঘাট রোড দিয়ে ২০-২৫ জনের একটি দুষ্কৃতী দল এলাকার বাসিন্দা আবিদ আলি কুরেশির বাড়িতে আক্রমণ করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৩
Share:

আতঙ্ক: এ ভাবেই রাফহার ঘরের জানলা ফুঁড়ে ঢুকেছে গুলি। শিবপুর ট্রাম ডিপো এলাকায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

রাত তখন প্রায় সাড়ে বারোটা। এক বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছিলেন রাফহা জাহান। পাঁচ বছরের বড় মেয়ে ঘুমোচ্ছিল পাশেই। আচমকাই খাটের পাশে জানলার কাচ ফুটো করে একের পর এক গুলি ছুটে আসতে থাকে বাইরে থেকে। জানলার কাচ ভেদ করে তা ঢুকে যায় তাঁর কপালে ও ডান হাতে। ওই অবস্থাতেই দুই মেয়েকে আঁকড়ে ধরে চিৎকার শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে পাশের ঘরের জানলা লক্ষ করেও গুলি ছুটে আসতে থাকে নীচের রাস্তা থেকে।

Advertisement

শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ এমনই ঘটেছে হাওড়ার শিবপুরের ট্রাম ডিপো এলাকায়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার দিন কাউস ঘাট রোড দিয়ে ২০-২৫ জনের একটি দুষ্কৃতী দল এলাকার বাসিন্দা আবিদ আলি কুরেশির বাড়িতে আক্রমণ করে। আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বাড়ি ঘিরে ফেলে ওই পরিবারের তিনতলা উপরে থাকা ফ্ল্যাটের জানলা লক্ষ করে গুলি চালায়। প্রায় আট রাউন্ড গুলি চলে। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান

আবিদ আলি কুরেশির ভাইয়ের স্ত্রী রাফহা জাহান। তিনি দুই কন্যা সন্তানকেও বাঁচান।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা জড়ো হয়ে আক্রমণকারীদের তাড়া করলে সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। ফের কয়েক রাউন্ড গুলি চলে। বোমা পড়ে। সেই সঙ্গে জিসিআরসি ঘাট রোডের উপরে ইট ও কাচের বোতলের বৃষ্টি চলে। বোমার স্‌প্লিন্টার ঢুকে গুরুতর আহত হন এক যুবক। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের সামনে এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলরের স্বামী এলাকার দুষ্কৃতীদের নিয়ে তাণ্ডব চালালেও পুলিশ ছিল নীরব দর্শক। যদিও পুলিশের দাবি, ঘটনার পরেই র‌্যাফ ও পুলিশ বাহিনী নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর শমিমা বানুর স্বামী শামিম আহমেদ ওরফে বড়ের দাবি, মাজহার খান ওরফে টিঙ্কু নামে এক দুষ্কৃতীর নেতৃত্বে এই গোলমাল হয়েছে। তিনি এর মধ্যে ছিলেন না। সে-ই বোমা মেরেছে ও গুলি চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কুরেশিদের বাড়িতে যে গুলি চালানোর কথা বলছে, তা ঠিক নয়। সব মিথ্যা।’’

কুরেশি পরিবারের এক সদস্য সাহেব কুরেশি বলেন, ‘‘কাউন্সিলরের স্বামীর বিভিন্ন অবৈধ কাজ কারবারের বিরুদ্ধে আমরা সব সময়ে প্রতিবাদ করেছি। তাই ২০১২ সালেও আমাদের উপরে আক্রমণ হয়েছিল। এ বারও বড়ের নেতৃত্বেই দুষ্কৃতীরা আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করল।’’

এলাকার বাসিন্দারা জানান, গুলির আওয়াজ ও চিৎকার শুনে তাঁরা বেরিয়ে এসেছিলেন। এর পরে সকলে মিলে দুষ্কৃতীদের তাড়া করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়ে ট্রাম ডিপোর কাছে ফের কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। পুলিশ এলে পুলিশ ও এলাকার বাসিন্দাদের লক্ষ করে ইট ও বোতল ছুড়তে শুরু করে। শীতের রাতের নিঃস্তব্ধতা ভেঙে বোমা পড়তে থাকে পরপর। ভাঙচুর করা হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চারটি গাড়ি। পরিস্থিতি সামালাতে হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তারা বিশাল বাহিনী নিয়ে ছুটে যান। রাত তিনটে নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরনো শত্রুতা ও এলাকা দখল ঘিরে এই সংঘর্ষ। দু’পক্ষই সশস্ত্র হামলার অভিযোগ করেছেন।’’

শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত বড়েকে। পুলিশ জানায়, এর পরেই ফের উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। আবার কয়েক রাউন্ড গুলি চলে। পরিস্থিতি সামলাতে এ দিনও নামাতে হয় র‌্যাফ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন